“মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল”—সিন্ডিকেটেড বিভ্রান্তি না কি পরিকল্পিত অপপ্রচার?

বিশেষ অনুসন্ধান প্রতিবেদন: ৪ জুন ভোর থেকে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক হঠাৎ করেই একযোগে একটি খবর লিড হিসেবে প্রকাশ করে—

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল।”

খবরে দাবি করা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করেছে। সংবাদটি এমনভাবে প্রকাশ করা হয়, যেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানেরও স্বীকৃতি বাতিল হয়েছে।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই সংবাদকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর” বলে ঘোষণা করে। সেখানে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে” এমন কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় নেয়নি, এমনকি আলোচনাও হয়নি।

পত্রিকাগুলোর রহস্যজনক ভূমিকা:

এখনো পর্যন্ত কোনো পত্রিকা এই বিভ্রান্তিমূলক খবর নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেনি, এমনকি ব্যাখ্যা করতেও রাজি হয়নি যে এই “একযোগে ভুল তথ্য প্রকাশ” কীভাবে ঘটল।

একই ভাষা, একই ফ্রেমিং, একসঙ্গে প্রকাশ—এসব ইঙ্গিত করে এটা ছিল একটি সিন্ডিকেটেড নিউজ ক্যাম্পেইন, যার উদ্দেশ্য ছিল হয়তো:

জাতির পিতাকে ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের রাজনৈতিক ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ করা, বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীলতা নিয়ে সন্দেহ ছড়ানো।

কারা করতে পারে এই অপপ্রচার?

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই সিন্ডিকেটের পেছনে বিশেষ একটি মহল কাজ করছে, যারা অতীতে নানা সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন, সামরিক আমলের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী, একটি প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী মহল, যারা বর্তমানে কিছু অ্যাকাডেমিক ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এবং সম্ভবত আসিফ নজরুল গং, যারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় ইস্যুতে “সাবোটাজ পলিটিক্স”-এ সক্রিয়।

সতর্কবার্তা ড. ইউনূসের প্রতি:

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যাদের নাম ‘নবীন নেতৃত্ব’ হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে, তাদের অনেকেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় সমর্থন দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড. ইউনূস ও তার আশপাশের শুভবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ এমন বিভ্রান্তিমূলক অভিযান সাধারণত বৃহৎ রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হয়ে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা ও কাজের বাস্তবতা:

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল গত ১০ মাসে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, নীতিমালা সংস্কার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। অথচ এই ধরনের বিভ্রান্তি রোধে কার্যকর জনসংযোগ, স্বচ্ছতা ও তথ্যপ্রকাশ প্রয়োজন ছিল।

কে করবে এই অনুসন্ধান?
এমন প্রশ্ন এখন সোচ্চার হয়ে উঠছে:

প্রেস কাউন্সিল নীরব কেন?

সম্পাদক পরিষদ ব্যাখ্যা দেবে না?

তথ্যমন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়, সংবাদমাধ্যমে সিন্ডিকেটের প্রভাব কতটা গভীর। একটি ভুল বা বিকৃত খবর ছড়িয়ে দিতে সিস্টেমেটিক নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে—তা এই ঘটনায় আবারও সামনে এলো।

এই ঘটনার বিচার শুধু “ভুল সংবাদ” হিসেবে করলে চলবে না। এটা ছিল একটি পরিকল্পিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ যুদ্ধ, যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির পিতার ভাবমূর্তি ও বর্তমান নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি।

রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বশীল অংশকে এখনই সরব হতে হবে।