ভারতে বাড়ছে সুপারবাগের প্রকোপ
টুইট ডেস্ক : অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী না হয়ে ওঠায় ব্যাপক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা হচ্ছে যা মারাত্মক সুপারবাগের প্রকোপ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের ফলে ওই ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীবের মধ্যে সেসব ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে, যা এগুলোকে ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্স।
এ অবস্থায় ‘সুপারবাগ’ নামে এক জাতীয় ‘ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেন’- এর উদ্ভব হতে পারে, যা এক বা একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। এ অবস্থায় রোগীর সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই নাগালের বাইরে থাকায় রোগীদের ওষুধ পেতে লড়াই করতে হয়েছে এমন ঘটনাও দেখা গেছে।
‘গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ (জিএআরডিপি) নামক অলাভজনক সংস্থার গবেষণায়, এই দুই ধরনের পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।
তাদের গবেষণার বিষয় ছিল, ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ৮টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে কার্বাপিনেম-রেজিস্টেন্ট-গ্রাম-নেগেটিভ (সিআরজিএন) সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা কতটা? এর জন্য প্রায় ১৫ লাখ ঘটনা খতিয়ে দেখা।
জিএআরডিপি’র তথ্য মতে, ওই সমস্ত দেশে মাত্র ৬.৯% রোগী সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, কার্বাপেনেম-রেজিস্টেন্স গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা কার্বাপেনেম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। এর আগে কার্বাপেনেমকে এই জাতীয় সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য শেষ অবলম্বন হিসেবে মনে করা হতো।
দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, কার্বাপেনেম-রেজিস্টেন্স গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং তার চিকিৎসার প্রচেষ্টার বেশিরভাগ ঘটনাই ভারতে দেখা গিয়েছে। এর চিকিৎসার জন্য ৮০% ক্ষেত্রে রোগী অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ কোর্স শেষ করলেও মাত্র ৭.৮% ক্ষেত্রে নিরাময় সম্ভব হয়েছে। নবজাতক এবং বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে এই ধরনের সংক্রমণ।
বিশেষত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন শক্তিশালী নয়, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা গুরুতর হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক সময় হাসপাতালের আইসিইউতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই সংক্রমণ। এর চিকিৎসা করা কঠিন এমন কী কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিষয়ক পরামর্শক ডা. আব্দুল গফুর বলেন, এই সংক্রমণ সব বয়সের রোগীদের মধ্যে নিত্যদিনই দেখা যায়। আমরা প্রায়ই এমন রোগীও দেখি যাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করে না এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে।
জিএআরডিপি’র গ্লোবাল অ্যাকসেস ডিরেক্টর এবং এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক ডা. জেনিফার কোহন বলেন, বহু বছর ধরে এই ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে মাত্রাতিরিক্তভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কঠোর বাস্তব বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হাই ড্রাগ রেজিস্টেন্স সংক্রমণে আক্রান্ত অনেক মানুষই প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের অ্যাক্সেস পাচ্ছেন না।
এখন প্রশ্ন হলো ভারতে ওষুধ-প্রতিরোধী সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক পেতে বাধা কোথায়?
চিকিৎসকদের মতে, এর নেপথ্যে একাধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে- যেমন সঠিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছানো, রোগ নির্ধারণের জন্য সঠিক পরীক্ষা করানো এবং যে ওষুধে কাজ হবে সেটা নাগালে পাওয়া। এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আরও একটা বিষয় হলো এর ব্যয়। এ অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অনেকগুলোর দাম দরিদ্র রোগীদের নাগালের বাইরে।
রোগীদের নাগালে আনতে হলে, এই ওষুধগুলো আরও সাশ্রয়ী করতে হবে আর অপব্যবহার রোধ করতে হলে কড়া নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নাগালের মধ্যে এই জাতীয় প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া এবং একইসঙ্গে অপব্যবহার রোধ করতে কার্যকর নীতি এবং শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা দুই-ই অপরিহার্য। কিন্তু নাগালের মধ্যে পাওয়া গেলেই যে এই সংকটের সমাধান হবে তেমনটা নয়।
তারা আরও জানিয়েছেন, ভারতে সবচেয়ে বেশি ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স’-এর ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু গবেষকদের মতে এই সমস্যা বিরুদ্ধের লড়াইয়ের চাবিকাঠিও ভারতের হাতেই থাকতে পারে এবং তা দেশজ ও বিশ্ব দুই স্তরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
প্রসঙ্গত, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (জীবাণু নিরোধক) এমন এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস এবং পরজীবী সহ অণুজীবের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় বা তাকে বিনাশ করে।
অন্যদিকে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এমন এক অবস্থা যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী সহ অণুজীবরা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ওষুধের উপস্থিতিতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে।