ট্রাম্পের বাজেট বিলকে ‘জঘন্য ও ন্যক্কারজনক’ আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক
টুইট ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত বাজেট বিলের কঠোর সমালোচনা করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি এটিকে ‘জঘন্য ও ন্যক্কারজনক বাজে বিল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
মাস্ক বলেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর অসহনীয় ঋণের বোঝা চাপাবে। বুধবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মাস্ক এই বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন। কয়েকদিন আগেই তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা (ডিওজিই)–এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেছেন। ওই দপ্তরে তার কাজ ছিল সরকারি খরচ কমানো ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ খাত চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিল করা।
মাস্ক লেখেন: “আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল শুয়োরের মাংসে ভরা কংগ্রেসীয় বিলটি জঘন্য ন্যক্কারজনক। যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাদের জন্য লজ্জা! আপনারা জানেন যে আপনারা ভুল করেছেন। আপনারা তা জানেন।”
তিনি দাবি করেন, বিলটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং এর ফলে দেশের নাগরিকরা ভয়াবহ ঋণের চাপে পড়বে।
কী আছে বিলটিতে?
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” নামে পরিচিত এই বাজেট প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্যোগ। বিলে রয়েছে: ২০১৭ সালের করছাড় অব্যাহত রাখা, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, জাতীয় ঋণের সীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো।
তবে এসব খরচের ভার সামলাতে গিয়ে বিলটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কড়া কাটছাঁট করার প্রস্তাব দিয়েছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) বলছে, এর ফলে: মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে, খাদ্য ভর্তুকি কর্মসূচি (এসএনএপি) থেকেও ২৬৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেওয়া হবে।
এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই পক্ষেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেক সংসদ সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে নিম্নআয়ের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আল জাজিরা বলছে, এই বিলটি গত ২২ মে ভোরে মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে (২১৫–২১৪) প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়। যদিও রিপাবলিকানদের সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে (২২০ আসন), কিন্তু কয়েকজন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন বা ভোট দেননি।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটদের সবাই অর্থাৎ ২১২ জন সদস্যই এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। মাত্র দুইজন রিপাবলিকান — থমাস ম্যাসি ও ওয়ারেন ডেভিডসন — দলের বিপক্ষে গিয়ে বিলের বিরোধিতা করেন।
মাস্কের এই সমালোচনার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে জানান: “প্রেসিডেন্ট জানেন মাস্ক এই বিল নিয়ে কী ভাবেন। তবে এতে প্রেসিডেন্টের মতামত বদলায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিলটি এক ‘বড় এবং সুন্দর অর্জন’, প্রেসিডেন্ট সেটাতেই আস্থা রাখছেন।”
তবে ট্রাম্প রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। মূলত পল মাস্কের অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে লিখেছেন: “আমি মাস্কের সঙ্গে একমত। আমরা দুজনেই জানি, সরকারের বিশাল অপচয় কেমন দেখতে, আর এই বিল আমাদের আরও ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ফেলবে।”
ট্রাম্প পাল্টা লেখেন: “র্যান্ড সবকিছুর বিরোধিতা করে, কিন্তু কোনও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিতে পারে না। কেবল পাগলামি করে। কেনটাকির জনগণ ওকে সহ্য করতে পারে না।”