ড্রোন হামলায় রুশ বোমারু বহরের এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস, পারমাণবিক হুমকি
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বহরের এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি
বিশ্ব ডেস্ক: ইউক্রেন “অপারেশন স্পাইডারস ওয়েব” নামে একটি সাহসী ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে চারটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে। এই হামলায় অন্তত ৪১টি রুশ কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রাশিয়ার দীর্ঘপাল্লার বোমারু বহরের প্রায় ৩৪%।
এই বোমারু বিমানগুলো রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার মূল অংশ হিসেবে বিবেচিত।
হামলার বিবরণ
অপারেশনটি ১৮ মাস ধরে পরিকল্পিত ছিল এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও নিরাপত্তা প্রধান ভাসিল মালিউকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ড্রোনগুলো রাশিয়ার অভ্যন্তরে গোপনে প্রবেশ করিয়ে ট্রাকের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে, দূর থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে এই ড্রোনগুলো রাশিয়ার বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে, যার মধ্যে সাইবেরিয়া, মস্কো ও আর্কটিক অঞ্চলের ঘাঁটিও অন্তর্ভুক্ত।
হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে টু-৯৫এমএস ও টু-২২এম৩ বোমারু বিমান এবং এ-৫০ আগাম সতর্কীকরণ বিমান। এই বিমানগুলো রাশিয়ার পারমাণবিক হামলা সক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও পারমাণবিক হুমকি
এই হামলার পর, রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। প্রো-ক্যামেরলিন ব্লগাররা এই হামলাকে “রাশিয়ার পার্ল হারবার” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার পার্ল হারবারে জাপানের আকস্মিক হামলার সঙ্গে তুলনীয়।
রাশিয়ার সামরিক নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে যে, যদি দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার সংরক্ষণ করে। এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেনের এই হামলা রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিকে আরও বাস্তব করে তোলে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
এই ঘটনার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতার ওপর বড় ধরনের আঘাত হেনেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি যুদ্ধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই অপারেশনকে “ইতিহাসে স্মরণীয়” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন, এটি ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই পরিস্থিতিতে, আসন্ন শান্তি আলোচনায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।