৮ বছর পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা: রাজশাহী কলেজে শৃঙ্খলা-সহযোগিতার অনন্য নজির
নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো দীর্ঘ আট বছর পর।
শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেশের ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহীর অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ ছিল এ বছরের অন্যতম কেন্দ্র। এখানে মানবিক শাখার মোট ১৫,৮৫৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। দেশজুড়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনে ছিল প্রশাসনিক নিষ্ঠা, কঠোর নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ পরীক্ষার্থীরা
পরীক্ষা আয়োজনে রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের তৎপরতা ছিল বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ, আসনবিন্যাস, প্রশ্ন বিতরণ এবং পরীক্ষা শেষে নির্গমনের প্রতিটি ধাপে ছিল পরিকল্পিত ও সময়ানুগ ব্যবস্থাপনা।
পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তি ও সন্তুষ্টি। কেউ কেউ বলেন, এত পরিপাটি ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের আগে কখনো হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মাহমুদা পারভীন বলেন, “স্টেশন থেকে কলেজে আসতে ছাত্রসংগঠনের বাইক সার্ভিস পেয়েছি। ওরা পথ দেখিয়েছে, সাহায্য করেছে—যা সত্যিই অনেক বড় সুবিধা।”
বগুড়ার তানভীর হাসান জানান, “প্রবেশের সময় স্টলে গিয়ে আমরা পরীক্ষার কক্ষের দিকনির্দেশনা পেয়েছি। এমনকি কলম ও পানি দেওয়া হয়েছে, মানসিক চাপ অনেকটাই কমে গেছে।”
পাবনার শিক্ষার্থী সাবরিনা হক বলেন, “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও অন্যান্য সংগঠনের স্টলে সহযোগিতা পেয়ে মনে হয়েছে যেন পরিবারের কেউ পাশে আছে।”
জোবায়ের আহমেদ নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, “প্রশ্নপত্র মোটামুটি সহজ ছিল, পরিবেশও দারুণ ছিল। আশা করছি রাজশাহী কলেজেই ভর্তি হতে পারব।”
শিক্ষার্থীদের পাশে ছাত্রসংগঠনগুলো
পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে একাধিক ছাত্রসংগঠন। এর মধ্যে ছিল—রাজশাহী কলেজ ছাত্রদল, রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থা।।
ছাত্রসংগঠনগুলো কলেজ চত্বরে স্থাপন করে তথ্য সহায়তা কেন্দ্র ও সেবামূলক স্টল।
স্টলগুলোতে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় পানি, কলম ও আসন খোঁজার তথ্য। কোথাও ছিল বাইক সার্ভিসও।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, “আমরা পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোকে কর্তব্য মনে করি। যেকোনো সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ।”
কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “এই সময়টাতে ছাত্ররাজনীতি নয়, বরং মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা সেবা দিয়েছি।”
অভিভাবকদের প্রশংসা
শুধু পরীক্ষার্থী নয়, অভিভাবকরাও প্রশংসা করেছেন এই সহযোগিতামূলক পরিবেশের।
নাটোর থেকে আসা মো. আজিজুল হক বলেন, “ছাত্রসংগঠনগুলোর টেন্টে বসার ব্যবস্থা ছিল, আমরা শান্তিতে বসে অপেক্ষা করতে পেরেছি।”
সিরাজগঞ্জের শাহনাজ বেগম বলেন, “আমার মেয়ে নিয়ে এসেছিলাম। ছাত্রসংগঠনের একজন আমাদের পরীক্ষার ভবনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এমন সহযোগিতা আর কোথাও পাইনি।”
রাজশাহীর বাইরের অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন, “ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ছেলেরা আমাদের পানির বোতল দিয়েছে, বসার জায়গা দেখিয়েছে। রাজনীতির চেয়ে এই মানবিক আচরণটাই শিক্ষাঙ্গনের জন্য বেশি প্রয়োজন।”
ভবিষ্যতের দিকে প্রত্যাশা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন পর সরাসরি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, ফলাফল হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সময়মতো প্রকাশিত।
এই পরীক্ষার সফল আয়োজন প্রমাণ করে, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক উদ্যোগ মিললে বৃহৎ পরিসরে শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে।
পরীক্ষা, শৃঙ্খলা ও সহযোগিতার এক অপূর্ব সমন্বয় রাজশাহী কলেজে দেখা গেছে—যা দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও হতে পারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।