ইন্দোনেশিয়ার যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণে বিপ্লব: J-10 ও Su-35 যুক্ত হচ্ছে
বিশ্ব ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়া তাদের যুদ্ধবিমান বহর আধুনিকীকরণের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, দেশটি ৪২টি ব্যবহৃত চীনা J-10 যুদ্ধবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্তের পথে রয়েছে এবং রাশিয়ার Su-35 সংগ্রহের পরিকল্পনাও আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে।
এর মাধ্যমে দেশটির বিমানবাহিনী ৬৬টি ক্যানার্ড-ডেল্টা কনফিগারেশন যুদ্ধবিমানের মালিক হতে যাচ্ছে, যা আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।
জটিল লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ
ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার বিমানবাহিনীতে থাকবে, ফরাসি Rafale, দক্ষিণ কোরিয়ার KF-21, চীনের J-10, রাশিয়ার Su-35।
এতসব আলাদা উৎস থেকে যুদ্ধবিমান কেনা মানে হলো-
পৃথক প্রশিক্ষণ কাঠামো, রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা,অস্ত্র ব্যবস্থা ও খুচরা যন্ত্রাংশ মজুদে বিপুল বৈচিত্র্য ও ব্যয়।
এই ধরনের বহু-সরবরাহকারী (multi-supplier) কৌশল একদিকে যেমন ইন্দোনেশিয়াকে কৌশলগত স্বাধীনতা দেবে, অন্যদিকে এর অপারেশনাল জটিলতা ও খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
J-10 ও Su-35 এর মতো প্ল্যাটফর্ম গ্রহণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। একই সময়ে তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চলমান চুক্তি (যেমন: Rafale, KF-21) বজায় রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করতে পারে-
ফ্রান্সের Dassault Aviation-এর সাথে Rafale প্রকল্পের ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করতে পারে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, F-15EX প্রকল্প থেকে সরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা রপ্তানিনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। এটি Boeing-এর স্থানীয় উৎপাদন পরিকল্পনা ও সাপ্লাই চেইন ইন্টিগ্রেশনকে সরাসরি প্রভাবিত করবে।
ভূ-অঞ্চলিক প্রেক্ষাপট
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা বাজার ও মিত্রতা কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। মধ্যম শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো (middle powers) এখন কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের দিকে এগোচ্ছে, এবং ইন্দোনেশিয়া এই প্রবণতার প্রতিচ্ছবি।
তারা চারটি বৃহৎ সামরিক শক্তির কাছ থেকে যুদ্ধবিমান পরিচালনার জটিলতা মেনে নিয়েও সর্বোচ্চ কৌশলগত নমনীয়তা বজায় রাখতে চায়।
কৌশলগত বার্তা
এই ঘোষণাগুলো যদি আসন্ন Indo Defence Expo-তে দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে, এক আন্তর্জাতিক উচ্চ-মঞ্চে কৌশলগত অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ, বিশ্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের দৃষ্টি আকর্ষণ, ইন্দোনেশিয়াকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ “swing state” হিসেবে তুলে ধরা।
ইন্দোনেশিয়ার এই আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা শুধু একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—”আমরা নির্ভর করি না কারও ওপর, আমরা আমাদের কৌশল নিজেরাই ঠিক করি”।
এই সিদ্ধান্ত আগামী বছরগুলোতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।