গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, মানবাধিকার সংগঠনের সতর্কতা
টুইট ডেস্ক : হামাস ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ পৌঁছেছে বলে সতর্ক করার পর মঙ্গলবার গাজায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতারা আশংকা করছেন, অবরুদ্ধ অঞ্চলটি শিগগিরই রোগ ও অনাহারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। সংগঠনগুলো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য ইসরায়েলের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
‘হামাস’ জানিয়েছে, মধ্য গাজায় সংঘর্ষ হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ভূখন্ডের দক্ষিণে মারাত্মক ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে।
ইসরায়েলের হামলাগুলো এখন যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল গাজার দক্ষিণের প্রধান শহর খান ইউনিসকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইজিপ্টের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে হামলা চালানো হচ্ছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় খুঁজছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোমবার গভীর রাতে বলেন, ‘হামাস’ বিলুপ্তির পথে, আইডিএফ তাদের শেষ শক্ত ঘাঁটিগুলো দখল করে নিচ্ছে।’
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল হিংসাত্মক হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে এবং এতে কমপক্ষে ১৮ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলের সেনা প্রধান হার্জি হালেভি সোমবার খান ইউনিসের কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, তার বাহিনী ‘গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশের প্রবেশদ্বার এবং মাটির গভীরের টানেল গুলোতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
জাতিসংঘ বলেছে, অঞ্চলটির ২৪ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৯ লক্ষ যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক নারী ও শিশু।
ইসরায়েল প্রথমে গাজার দক্ষিণে বেসামরিকদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজার আহ্বান জানিয়েছিল। সেখানে লোকজনকে যাওয়ার জন্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। এখন ইযরায়েল-হামাস যুদ্ধ দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানেও ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে ইযরায়েলি সেনারা।
উত্তরের গাজা শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর উম্মে মোহাম্মদ আল-জাবরি রাফাতে বিমান হামলায় সাত শিশুকে হারিয়েছেন।
৫৬ বছর বয়সী জাবরি বলেন, গত রাতে আমরা যে বাড়িতে ছিলাম তা বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়া হয়ছে। সেখানে আমার চার সন্তান মারা যায়। তারা বলেছিল রাফাহ হবে নিরাপদ জায়গা। সত্যি বলতে কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।
‘দ্বিতীয়’ বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির ভূখন্ডের ধ্বংসের সঙ্গে তুলনা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল সোমবার বলেছেন, ‘গাজার বেসামরিক নাগরিকরা একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন’।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ অনুসারে গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৪টি কোনভাবে চালু আছে। তাও আবার পর্যাপ্ত জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অবশিষ্ট হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে সোমবার ইযরায়েলি হামলার পর মধ্য গাজায় আল-আকসা হাসপাতাল কয়েক ডজন শিশুসহ আহতদের ভিড়ে উপচে পড়েছে।
গাজা শহরের আল-রিমাল আশপাশে ইযরায়েলি হামলায় আশপাশের বাড়িঘর ও দোকান ধ্বংস হওয়ার পর হাজার হাজার প্যালেস্টেনিয়ান জাতিসংঘের একটি সংস্থার সদর দফতরে শিবির স্থাপন করে।
এএফপি’র একজন সংবাদদাতা জানিয়েছে, ইসলামিক এবং সংলগ্ন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মঙ্গলবার গাজায় “অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি’’ দাবি করে একটি অবাধ্যতামূলক প্রস্তাবে ভোট দেয়ার কথা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির একটি আহ্বান পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে।