‘গন্তব্য না পৌঁছাতে পারলে ঈদের আনন্দ অর্থহীন’ ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেল চালকদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা

বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশে প্রতি ঈদেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। আনন্দ আর প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর আশায় হাজারো মানুষ পাড়ি জমান দূরপাল্লার পথ। কিন্তু সেই যাত্রা অনেকের জন্যই শেষ হয়ে যায় রক্তাক্ত এক পরিসমাপ্তিতে।

২০২৪ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান (বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি – BJKS)

মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা-

মোট দুর্ঘটনা: ২,৩২৯টি (৩৬.৬২%)
মোট মৃত্যু: ২,৫৭০ জন (৩০.০৮%)
মোট আহত: ৩,১৫১ জন (২৪.৯৯%)রোড

সেফটি ফাউন্ডেশন (RSF) তথ‌্য ম‌তে-

মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু: ২,৬০৯ জন (৩৫.৭৬%)

সম্প্রতি পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২৫-এর ছুটিতে দেশের বিভিন্ন সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন আনুমানিক ২২৮ জন মানুষ, যার মধ্যে ১৩৮ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার।

এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয় — প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একেকটি স্বপ্ন, একেকটি পরিবার। ঈদে যখন সবাই হাসে, তখন এই পরিবারগুলো বুক ভাসায় শোকে।

কে এই “গতি প্রেমী”?

চাকরি করেন না, ব্যবসাও নয়, ঘরোয়া দায়িত্ব থেকেও মুক্ত — তবুও তিনি বাইকে চড়ে ‘ইমারজেন্সি’ মুডে ছুটে চলেছেন কোথায়?

প্রিয় উঠতি বয়সি কিশোর ও যুবক ভাই, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো — গতি নিয়ন্ত্রণ করা। মজা, উল্লাস বা বন্ধুর উসকানিতে পড়ে আপনি হয়ত একটু বেশি স্পিডে বাইক চালালেন, কিন্তু সেটাই হতে পারে আপনার শেষ যাত্রা।

মৃত্যুর মিছিলের পেছনে যা যা ছিলো-

হেলমেট বিহীন চালানো এবং ওভারটেকিং। প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক সিগনাল অমান্য, রাতভর বাইক রাইডের নামে ‘স্টান্টবাজি’।

একটি জীবন মানেই একটি পরিবার

আপনি যদি দুর্ঘটনায় পড়েন, কেবল আপনি নন — আপনার বাবা, মা, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব — সবাই সেই দুর্ঘটনার শিকার হন মানসিকভাবে। যখন আপনার নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়, তখন আপনার প্রিয় মানুষগুলোর হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে যায়।

আর বাকি মানুষ? তারা ছবি তোলে, ভিডিও করে, ফেসবুকে পোস্ট দেয় — কিন্তু কেউ ফেরাতে পারে না আপনার জীবন।

যা করতে পারেন এই ঈদে-

১. বাইক চালালে হেলমেট পরুন — চালক ও আরোহী উভয়েই।
২. ট্রাফিক আইন মানুন।
৩. দীর্ঘ যাত্রায় বিশ্রাম নিন, তাড়াহুড়া নয়।
৪. ‘দেখা যাবে’ ভেবে ঝুঁকি নেবেন না
৫. নিজে সচেতন হন, বন্ধুদের সচেতন করুন।

স্মরণ রাখুন, ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সবাই নিরাপদে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছায়।

আপনার হাতে স্টিয়ারিং, কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনার জীবনের। গতি নয়, নিরাপত্তাই হোক এই ঈদের অঙ্গীকার।