প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।

সোমবার (২৬ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনার উদ্বোধন তিনি নিজেই করবেন। গত ১৯ মে শেষ হওয়া প্রথম দফার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরবর্তী পর্বের সূচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সংস্কারে জনসম্পৃক্ততার আহ্বান

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। কেউ যেন ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিতে না পারে সেই বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ ভোটের আয়োজন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এত বড় অভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, সেটা যেন আবার সংকটে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সভায় অংশগ্রহণকারী কমিশনের সদস্যরা জানান, দ্বিতীয় দফার আলোচনায় শুধু রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজ, তৃণমূল সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হবে, যাতে সংস্কার প্রক্রিয়া আরও ব্যাপক ভিত্তি লাভ করে।

অনিয়ম তদন্তে স্বাধীন কমিশনের প্রস্তাব

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

প্রশাসনিক সংস্কার ও অরগানোগ্রাম পুনর্বিন্যাসের তাগিদ

কমিশন সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, ১৯৮২ সালে গঠিত এনাম কমিশনের তৈরি করা অরগানোগ্রাম এখনো সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে চলমান রয়েছে, অথচ সময়ের চাহিদায় বহু সংস্থা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে এবং নতুন অনেক সংস্থা গঠিত হয়েছে। এজন্য তিনি অবিলম্বে একটি জনপ্রশাসন সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠনের দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, “একাধিক কমিশন এনবিআর সংস্কারে কাজ করেছে, কিন্তু তাদের মাঝে সমন্বয়ের অভাবে কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।”

বিচার বিভাগ ও অন্যান্য খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রস্তাব

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এমদাদুল হক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে গঠিত কমিশন যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে গঠিত ছয়টি কমিশনের বাইরে গণমাধ্যম, নারী, স্বাস্থ্য, শ্রম ও স্থানীয় সরকার খাতে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি জাতীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন জরুরি।

স্থানীয় সরকার আইন সংস্কারে আহ্বান

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছিল তা অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া কার্যকর নির্বাচনী সংস্কার সম্ভব নয়।”

পুলিশ সংস্কারে প্রতিনিধিত্ব

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি সফর রাজ হোসেন, যিনি পুলিশ বাহিনীতে জবাবদিহিতা, পেশাগত মানোন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঐকমত্য কমিশনের এই বহুমাত্রিক আলোচনাভিত্তিক উদ্যোগ একদিকে যেমন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করার রূপরেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে সম্ভাব্য দিকনির্দেশনাও তুলে ধরছে।