ব্যাংক আমানতে মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ : সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

ছবি : প্রতীকী

টুইট ডেস্ক : ৩ মাসে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টধারীদের আমানত কমেছে ৫,৭৮২ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র ৩২টি কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারী বেড়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির ও ডলার সংকটে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টধারীদের আমানত কমেছে ৫,৭৮২ কোটি টাকা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র ৩২টি কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারী বেড়েছে। গ্রাহক ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ আমানতের সুদ পাচ্ছে তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি প্রায় দ্বিগুণ। গ্রাহক যে টাকা প্রফিট পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি সংসার খরচে লাগছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এক কোটি বা তারচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে এরকম অ্যাকাউন্টধারীদের ব্যাংকের আমানত টাকার পরিমাণ কমেছে দাঁড়িয়েছে ৭.২৫ লাখ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে জুন প্রান্তিকে ছিল ৭.৩১ লাখ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলেন, অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ আমানতের টাকা ভেঙে খাচ্ছে। বিদেশি ক্রেতাদের ওয়ার্ডার কমে যাওয়ায় অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া, ডলারের সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। মূলত এসব কারণেই ব্যবসায়ীদের আমানতের টাকা কমে যাচ্ছে।

তারা বলছেন, কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সে পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে নেই। অর্থাৎ, কোটিপতি ব্যক্তির সংখ্যা কত তা বোঝা যাচ্ছে না। এখানে প্রতিষ্ঠানেরই অ্যাকাউন্ট বেশি।

মেঘনা ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, “কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট। এরমধ্যে বেশিরভাগই সরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট। সরকার নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঘাটতি ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। যার কারণে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট ছিল সেগুলো অনেকটা কমে যাচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৩,৫৮৬টি; যা আগের বছরের একইসময়ে ছিল ১,০৬,৫২০টি।

রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র ৩২টি কোটিপতি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বেড়েছে। যদিও আগের জুন প্রান্তিকে এসব অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বেড়েছিল ৩,৩৬২ টি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রাহক ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ আমানতের সুদ পাচ্ছে তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি প্রায় দ্বিগুণ। গ্রাহক যে টাকা প্রফিট পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি সংসার খরচে লাগছে। এ কারণে জমানো টাকা কমে আসছে।

তিনি আরো বলেন, “ব্যাংকে টাকা রাখলে যে লাভ পাচ্ছে তার তুলনায় প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করলে বেশি লাভ হচ্ছে। এর কারণেও ডিপোজিট কমে যাচ্ছে।”

দেশের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের নভেম্বরে ৯.৪৯% এ দাঁড়িয়েছে, যদিও ব্যাংকগুলোতে নভেম্বরে আমানতের গড় রেট হচ্ছে ৪.৫%।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো আমানত বেড়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ আগের জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর আমানত বড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

দেশের বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে মোট অ্যাকাউন্ট হোল্ডার রয়েছে ১৪.৯৭ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ১৭.১৩ লাখ কোটি টাকা।

দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে জানা যায়, এ ব্যাংকগুলোর কোটি টাকার বেশি হিসাবের মাত্র ৫-৭ শতাংশ ব্যক্তির। বাকি হিসাবগুলো সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের প্রতিষ্ঠানের।

এর মধ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও।