চীনের বৈশ্বিক ঘাঁটি পরিকল্পনায় ঢাকার নাম: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন

চীনের বৈশ্বিক সামরিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় বাংলাদেশের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উদ্বেগ

বিশ্ব ডেস্ক: চীন বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতির সম্ভাবনা বিবেচনা করছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (Defense Intelligence Agency – DIA)। সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘2025 Worldwide Threat Assessment’-এ এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে চীন বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করছে। এর অংশ হিসেবে তারা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, তথ্যগত এবং সামরিক সক্ষমতা জোরদারে মনোযোগ দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে চীনা সামরিক ঘাঁটি বা উপস্থিতির বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সম্ভাব্য দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ

প্রতিবেদনে যেসব দেশে চীন সামরিক ঘাঁটি বা উপস্থিতির চিন্তা করছে বলে জানানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে-

বাংলাদেশ, মিয়ানমার (বার্মা), থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং তাজিকিস্তান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্বকে বোঝায়।

চীনের লক্ষ্য ও প্রস্তুতি

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে তিনটি মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে-তাইওয়ান পুনঃদখল, অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণ।

২০৫০ সালের মধ্যে প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন

এছাড়াও, পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির দিকেও চীন মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬০০ ছাড়িয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১,০০০-এর বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অধিকাংশ ওয়ারহেড উচ্চ প্রস্তুতির স্তরে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য মোতায়েন থাকবে।

ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বলা হয়েছে-পাকিস্তান ভারতকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে।

অন্যদিকে, ভারত চীনকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে এবং পাকিস্তানকে একটি গৌণ নিরাপত্তা সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে।

এনডিটিভির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা প্রভাব মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক ভূমিকায় নেতৃত্ব দিতে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব জোরদার করছে।

মার্কিন উদ্বেগ ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ডিআইএ-এর এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বৈশ্বিক সামরিক উচ্চাভিলাষকে তাদের কৌশলগত প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং বেইজিংয়ের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ওয়াশিংটনের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ এখনো এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে একটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক রয়েছে, তবে সামরিক উপস্থিতির বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।