চট্টগ্রামে কুকি-চিনের ২০ হাজার ইউনিফর্ম, গ্রেপ্তার ৩
চট্টগ্রামে ২০ হাজার কুকি-চিন ইউনিফর্ম জব্দ: কারখানার মালিকসহ গ্রেপ্তার ৩, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা
টুইট ডেস্ক: চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় অবস্থিত ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামের একটি পোশাক কারখানায় অভিযান চালিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) জন্য তৈরি করা ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কারখানার মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানের সাত দিন পর গত ২৫ মে (রোববার) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মে রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং বায়েজিদ থানা পুলিশ যৌথভাবে রিংভো অ্যাপারেলসে অভিযান চালায়। অভিযানে ৩২০ বস্তা ইউনিফর্ম কারখানার গোডাউন থেকে এবং আরও ২৬০ বস্তা পোশাক নগরীর নয়ারহাট এলাকার কারখানা ফ্লোর থেকে উদ্ধার করা হয়। মোট ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলাম, ইউনিফর্ম তৈরির কার্যাদেশ প্রদানকারী গোলাম আজম এবং নিয়াজ হায়দার। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের ছোটপুল এলাকা থেকেও অভিযান চালানো হয়।
বায়েজিদ থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গত ১৮ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার মংহ্লাসিং মারমা (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত মার্চ মাসে মংহ্লাসিং মারমার মাধ্যমে কেএনএফ সদস্যদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকায় ইউনিফর্ম তৈরির কার্যাদেশ নেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা এসব পোশাক তৈরি করার জন্য রিংভো অ্যাপারেলসকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেন। কেএনএফ সদস্যরাই তাদের নির্ধারিত কাপড় সরবরাহ করেছিল, যার ডেলিভারি চলতি মাসে হওয়ার কথা ছিল।
রিংভো অ্যাপারেলসের প্রডাকশন ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, “এসব পোশাক তৈরির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমরা সাধারণত সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করি। কারখানায় মাত্র ৫০-৬০টি সেলাই মেশিন রয়েছে। ইউনিফর্মগুলোর অর্ডার কাদের থেকে এসেছে, তা আমাদের জানা ছিল না।”
তবে পুলিশ এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ, বায়েজিদ থানার ওসি এবং ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) পরিচিতি
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের অস্তিত্ব ২০২২ সালের শুরুতে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত, যা মূলত বম জনগোষ্ঠীর অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। তবে সংগঠনটি বম ছাড়াও পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রো জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়েও কাজ করে বলে দাবি করা হয়। পাহাড়ে স্থানীয়ভাবে সংগঠনটি ‘বম পার্টি’ নামেও পরিচিত।
পাহাড়ে কেএনএফ দমনে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, অস্ত্র উদ্ধার, এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কুকি-চিন নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।