শেহবাজ শরিফের চার দেশের সফর শুরু: প্রথম গন্তব্য তুরস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরিফ শনিবার (২৪ মে) সকাল বেলা লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দিয়ে তাঁর ছয় দিনের চার-দেশীয় সফর শুরু করেছেন। এই সফরটি ২৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলবে, যার আওতায় তিনি তুরস্ক, ইরান, আজারবাইজান এবং তাজিকিস্তান সফর করবেন।
এই সফরকে বিশ্লেষকরা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থান পুনর্বিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
প্রথম গন্তব্য: তুরস্ক
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণ, এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করাও এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রথমে পৌঁছেছেন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাতে, যেখানে তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এই সফর দুই দেশের দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক এবং সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও জোরদার করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
তুরস্ক আলোচনা হবে যেসব বিষয়ে তার মধ্যে-তুরস্ক-পাকিস্তান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA), প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় ও যৌথ মহড়া, তুরস্কে কর্মরত পাকিস্তানি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, পাকিস্তানের বন্যা ও সংকটকালে তুরস্কের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ গুরুত্বপূর্ন।
দ্বিতীয় গন্তব্য: ইরান
তুরস্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী রওনা হবেন ইরানের রাজধানী তেহরানে। সেখানে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
মূল আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে থাকবে- সীমান্ত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, জ্বালানি আমদানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ, চাবাহার ও গওদার বন্দরের মধ্যে সেতুবন্ধন প্রকল্প, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনায় পারস্পরিক অবস্থান বিনিময়।
তৃতীয় গন্তব্য: আজারবাইজান
ইরান সফর শেষে শেহবাজ শরিফ যাবেন বাকু, আজারবাইজানের রাজধানী। সেখানে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং একাধিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রত্যাশিত আলোচনার মধ্যে রয়েছে- পাকিস্তান-আজারবাইজান যৌথ গ্যাস ও তেল প্রকল্প, প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা, ইসলামিক দেশগুলোর ফোরামে সমন্বয়, কারাকোরাম-তুর্কি-আজারবাইজান ট্রানজিট করিডোর।
শেষ গন্তব্য: তাজিকিস্তান
সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী যাবেন তাজিকিস্তান, যেখানে রাষ্ট্রপতি ইমোমালি রাহমান-এর সঙ্গে বৈঠক হবে। তাজিকিস্তান পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র, বিশেষ করে CASA-1000 বিদ্যুৎ প্রকল্প ও আফগানিস্তান সংযোগের দিক থেকে।
আলোচ্য বিষয় হতে পারে- বিদ্যুৎ ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আফগানিস্তান সংকটে যৌথ কৌশল, বাণিজ্য রুট সম্প্রসারণ, সংস্কৃতি ও পর্যটনে বিনিময় কর্মসূচি।
ভারত ইস্যু ও কূটনৈতিক বার্তা
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তুরস্ক, ইরান, আজারবাইজান ও তাজিকিস্তানের সহানুভূতি ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফর কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি জিওস্ট্র্যাটেজিক বার্তা — পাকিস্তান বিকল্প মিত্র খুঁজছে এবং নিজস্ব কৌশলগত জোট শক্তিশালী করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের এই চার-দেশীয় সফর পাকিস্তানের আঞ্চলিক কূটনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে।
এই সফরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান বিকল্প জোট গঠন, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা খোঁজা, এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল গ্রহণ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই সফর পাকিস্তানের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।