মালয়েশিয়ায় আসিয়ান অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক

  •  অর্থনৈতিক ঐক্য আরও জোরদার করতে ঐকমত্য
  • বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সুযোগের নতুন সম্ভাবনা

বিশ্ব ডেস্ক: আসন্ন ৪৬তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৫তম আসিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি কাউন্সিল (AECC) বৈঠক। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেন আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীবৃন্দ।

আলোচনায় উঠে আসে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ইস্যু, যার মধ্যে প্রাধান্য পায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তঃআসিয়ান বাণিজ্য বৃদ্ধির আহ্বান।

বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী দাতুক সেরি তেংকু জাফরুল। তিনি বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আসিয়ান দেশগুলোর উচিত একত্রে কাজ করা। ইন্টার-আসিয়ান বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে বাইরের দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ানের পরিমিত অবস্থানকে “বিচক্ষণতা” হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি আরও বলেন, “প্রতিশোধমূলক পথে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখাই আসিয়ানের নীতিগত অবস্থান, যা স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে।”

বৈঠকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন— ব্রুনেই-অর্থমন্ত্রী দাতুক আওয়াং মোহাম্মদ আমিন লিউ, কম্বোডিয়া- বাণিজ্যমন্ত্রী চ্যাম নিমুল, ভিয়েতনাম- শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিউয়েন হং দেন, ইন্দোনেশিয়া- বাণিজ্যমন্ত্রী বুদি সান্তোসো, লাওস- শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী মালাইথং কোম্মাসিথ, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং আসন্ন সদস্য তিমুর লেস্তের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

৪৬তম আসিয়ান সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো “অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব” (Inclusion and Sustainability), যা মালয়েশিয়ার ২০২৫ সালের চেয়ারম্যানশিপের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি দেশটির পঞ্চমবার আসিয়ান চেয়ারম্যান হওয়া।

সম্মেলনে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট, আসিয়ান-গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সম্পর্ক, আসিয়ান-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, সবুজ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই প্রযুক্তি বিনিয়োগ

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন দিক

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ও সহযোগিতামূলক রূপরেখা বাংলাদেশের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ-

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আসিয়ান ট্রেড ব্লকে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এমন সময়ে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্য ঘনিষ্ঠতা ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের জন্য নির্দেশনা হতে পারে।

বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ-

আসিয়ান দেশগুলোতে সবুজ ও টেকসই শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব শিল্পখাতে সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

মিয়ানমার সংকটের প্রভাব-

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আসিয়ানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আসিয়ান যদি সক্রিয় ও সমন্বিত অবস্থান নেয়, তবে তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।

গালফ ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক-

আসিয়ান-জিসিসি ও আসিয়ান-চীন সম্মেলনের মাধ্যমে যে কৌশলগত অগ্রগতি ঘটবে, তাতে বাংলাদেশও পারস্পরিক সম্পর্ক ও শ্রমবাজারে লাভবান হতে পারে।

আসিয়ান ইকোনমিক কাউন্সিলের এই বৈঠক আঞ্চলিক অর্থনীতিকে আরও সংহত করার একটি পদক্ষেপ। বাংলাদেশ যদি এই আঞ্চলিক মঞ্চে যুক্ত হতে চায়, তাহলে এখন থেকেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত, নীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।