রাফাল ইস্যুতে ফ্রান্স-ভারত উত্তেজনা

ভারতের অনুমতি না দেওয়ায় রাফাল তদন্তে ফরাসি ক্ষোভ, উত্তেজনা কূটনৈতিক মহলে

বিশ্ব ডেস্ক: ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে থাকা রাফাল যুদ্ধবিমানের মান, ব্যবহার ও বিতরণ সংক্রান্ত একটি তদন্তের অংশ হিসেবে ফ্রান্সের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন (investigative commission) দেশটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাসো অ্যাভিয়েশনের (Dassault Aviation) একটি নিরীক্ষক দলকে (audit team) ভারতে পাঠিয়েছিল। তবে ভারত সরকার ওই দলটিকে তৎক্ষণাৎ বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় ফরাসি পক্ষ ব্যাপক অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছে।

বিশ্বস্ত কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, ভারত সরকার দলটির অনুরোধে সাড়া না দিয়ে বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিকে “অসুরক্ষিত” (insecure) ঘোষণা করে সেসব স্থানে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। ফলে ফরাসি নিরীক্ষক দল কার্যত আটকে পড়ে এবং তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ফরাসি কূটনীতিকদের

ফরাসি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, “এটি শুধু তদন্ত দলের কার্যক্রমে বাধা নয়, বরং ভারত-ফ্রান্স সামরিক সহযোগিতার ওপরে আস্থার প্রশ্নও তুলে দেয়।” কমিশনের কয়েকজন সদস্য সরাসরি ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের এই আচরণকে।

তাদের মতে, রাফাল চুক্তির স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থেই এই পরিদর্শন অত্যন্ত জরুরি ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এমন আচরণ ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা শিল্পে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য এসেছে।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো বিবৃতি না এলেও, একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, “সুরক্ষা জনিত কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদেশি নিরীক্ষক দলকে এভাবে সেনা স্থাপনাগুলোর অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জাগায়।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক তদন্তের স্বচ্ছতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাফাল ইস্যুতে নতুন মাত্রা

রাফাল চুক্তি নিয়ে আগে থেকেই ভারতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত ছিল। এবার ফরাসি নিরীক্ষা দলকে আটকে দেওয়ার ঘটনায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিসরে নতুন মাত্রা পেল। পরবর্তী পদক্ষেপে কী হবে তা নির্ভর করছে দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক আলোচনার ওপর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনায় ফ্রান্স-ভারত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সাময়িক চাপের মুখে পড়তে পারে, যদিও দীর্ঘমেয়াদে তা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে রাফাল নিয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হতে শুরু করেছে—তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট।