তিন দলই ইউনূসের পক্ষে: সমর্থন পেলেন ড. ইউনূস
- সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়: জামায়াত
- আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির
- বিতর্কিত উপদেষ্টা অপসারণ চায়বিএনপি
- ডিসেম্বর-জুনে নির্বাচনের আভাস
টুইট প্রতিবেদন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
একদিনে আয়োজিত এই ধারাবাহিক বৈঠকে অংশ নিয়ে দলগুলো নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা ও সমর্থনও প্রকাশ করেছে তারা।
জামায়াতের শর্ত: আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন
শনিবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে জনগণের আশা পূরণ হবে না।’ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে সন্তোষজনক নিষ্পত্তি ছাড়া নির্বাচন হওয়া উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, জনগণ যেন একটি “কমফোর্টেবল টাইমে” তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে লক্ষ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ জরুরি। তিনি বিচার ও সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানোর দাবিও জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর জনগণ তিনটি নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবার যেন তারা অবাধে ভোট দিতে পারে, সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে বলেও মত দেন তিনি।
এনসিপির দাবি: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও পুরনো নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা, পূর্ববর্তী বিতর্কিত নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পুনর্বাসন এবং ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করেছি যে উপদেষ্টা হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন, বরং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করছেন।’
বিএনপির দাবি: বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ
বিএনপি লিখিতভাবে তিনজন উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টার কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এদের অপসারণের দাবি আগেও জানানো হয়েছিল, এবার তা আবারও জানানো হয়েছে। বিএনপি অবশ্য নির্বাচন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান: সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তিনটি দলই চায়, নির্বাচন যেন প্রধান উপদেষ্টার অধীনেই হয় এবং তিনি যেন দায়িত্বে থাকেন। তিনি জানান, ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার বিষয়ে জামায়াত ও এনসিপি সমর্থন জানিয়েছে। যদিও বিএনপি কিছু দ্বিমত পোষণ করেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই এই বৈঠকগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। তবে সবাই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এখন দেখার বিষয়—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দলগুলোর এই প্রস্তাব ও মতামতকে কীভাবে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন।