বাংলাদেশ ২৫৫ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করল ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, ফার্স্টপোস্ট, হিন্দু বিজনেস লাইন
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (GRSE)-এর সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৫৫ কোটি টাকা বা ১৮০ কোটি রুপি) মূল্যের টাগ বোট ক্রয়চুক্তি বাতিল করেছে।
এই চুক্তি বাতিল শুধু একটি প্রতিরক্ষা কেনাবেচার ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক কূটনীতিতে আত্মবিশ্বাস, ভারতের ওপর নির্ভরতা কমানোর সংকেত, এবং চীনকে কৌশলগত বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা। এটি স্পষ্ট করে দেয়, বাংলাদেশ এখন এক স্বাধীন ও ব্যালান্সড পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে—যেখানে নিজস্ব স্বার্থই মুখ্য।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও জিআরএসই-এর মধ্যে এই টাগ বোট কেনার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই টাগ বোটটির ওজন ছিল ৮০০ টন।
চুক্তিটি ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ডিফেন্স লোন চুক্তির প্রথম বড় প্রকল্প।
এই ঋণচুক্তির অধীনে শেখ হাসিনা সরকারের সময় থেকে বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, যার মধ্যে এই টাগ বোটও ছিল।
কেন চুক্তি বাতিল?
ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, ভারত সম্প্রতি তাদের স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এর জবাবে বাংলাদেশ সরকার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করে।
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই অঞ্চলের সমুদ্র অভিভাবক বাংলাদেশ।”
তিনি চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলে ব্যবসায়িক প্রবেশের সুযোগ তৈরির প্রস্তাবও দেন।
ভারত বিষয়টিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং তাই বাংলাদেশে চাপ প্রয়োগ করে থাকে বলে বিশ্লেষকদের মত।
ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, হিন্দু বিজনেস লাইন, এবং ফার্স্টপোস্টসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়।
জিআরএসই কোম্পানি নিজেই ভারতের পুঁজিবাজারে জানিয়েছে যে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।
হিন্দু বিজনেস লাইন উল্লেখ করে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তি বাতিল হয়েছে।
ভারতীয় ঋণ সহায়তার চিত্র
গত ৮ বছরে ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ‘লাইন অব ক্রেডিট’-এর মাধ্যমে দিয়েছে।
এসব অর্থে অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিরক্ষা খাতে উন্নয়ন ইত্যাদি প্রকল্প চলছে।
এই ঘটনাটি দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্য, এবং চীন-ভারত প্রভাব বলয়ের প্রতিযোগিতা ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এক নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।