বোয়িং বেচার প্রস্তাব হাসের, বাংলাদেশ চায় নিউইয়র্ক ফ্লাইট
টুইট ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পর এবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
সোমবার ঢাকায় বেবিচক কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এ প্রস্তাব দেন মার্কিন দূত পিটার হাস। বৈঠকে আকাশপথের নিরাপত্তা, ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পিটার হাস। ওই বৈঠকে পিটার হাসের সঙ্গে বোয়িং কোম্পানির একজন ভাইস প্রেডিডেন্ট ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একজন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
বেবিচক সূত্র জানায়, বেবিচক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা–নিউইয়র্ক রুট চালুর বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা চান বেবিচক চেয়ারম্যান।
ফ্লাইট চালুতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিমানের কাছে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারের নতুন সংস্করণ ৭৮৭-১০ বিক্রির বিষয়ে প্রস্তাব দেন পিটার হাস। এ ছাড়া আকাশপথের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও বেবিচকের ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণে নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, বৈঠকে বিমানের নিউইয়র্ক রুট ও নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি যেহেতু বেবিচকের আওতায় নয়, তাই বোয়িংয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি।’
বেবিচককে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি (এফএএ)। মূলত ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে এটি করে এফএএ। এফএএ’র ক্যাটাগরি–১ ছাড়পত্র না থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না।
সম্প্রতি বিমানের জন্য নতুন প্রজন্মের এক ঝাঁক উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং না ফ্রান্সের এয়ারবাস থেকে কেনা হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ জনগণের মধ্যেও চলছে সরগরম আলোচনা।
এক দশক ধরে বিমানের বহরে প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বোয়িংয়ের। কিন্তু এশিয়ান টাইগার হিসেবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে বোয়িং বাজার হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই বাজার দখলে নিতে যাচ্ছে বোয়িংয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্সের এয়ারবাস।
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে আসেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সফর শেষে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে তিনি জানান, এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে প্রথমবারের মতো সরে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে বিমানের জন্য বোয়িং থেকে দশটি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি হয়। তখনকার সময়ে চুক্তি মূল্য ছিল আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে সুপরিসর দেহের ১৬টিই বোয়িংয়ের তৈরি। এরমধ্যে মধ্যে রয়েছে- বোয়িংয়ের সর্বাধুনিক মডেলের ছয়টি ৭৮৭-৮০০ ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজ এবং চারটি ৭৭৭-৩০০ মডেলের। বোয়িংয়ের আরও রয়েছে ৭৩৭-৮০০ মডেলের ছয়টি উড়োজাহাজ। বিমানের বাকি পাঁচটি ছোট উড়োজাহাজ হলো, কানাডার তৈরি ড্যাশ-৮ মডেলের।
বাংলাদেশ ফ্রান্স থেকে যে ১০টি এয়ারবাস এ-৩৫০ উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই উড়োজাহাজগুলোর সববই সুপরিসর দেহের সর্বাধুনিক মডেলের।
আর বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইন মডেলের সর্বশেষ যে ভার্সনগুলো বের করেছে বাংলাদেশের সেগুলো বিক্রি করতে চাচ্ছে।
গত ৫ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর একটি পত্রিকাকে বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, ‘বোয়িংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
‘বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাবটি ঢাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে’ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবোলিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে আরেকটি সংবাদমাধ্যম।