অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্তে ৩০ দিনের সময়সীমা: ভারত সরকারের কঠোর বার্তা
বিশ্ব ডেস্ক: ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে—বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আগত সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসন চিহ্নিত করে সম্ভাব্য বহিষ্কারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনায় রাজ্যগুলোকে “পরিচয় যাচাই, জাতীয়তা নির্ধারণ, এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের” সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থিতি সহনীয় নয়।”
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
সম্প্রতি একটি মামলার শুনানিতে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর মন্তব্য করে। আদালত বলেন, “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়, যেখানে সবাই এসে আশ্রয় নিতে পারবে।” আদালতের পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, দীর্ঘমেয়াদে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে।
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসীরা লক্ষ্যবস্তু?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, তেলেঙ্গানা ও জম্মু-কাশ্মীরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অভিবাসীর বসবাস রয়েছে। সম্প্রতি হরিয়ানা ও জম্মু থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা আটক এবং বিশেষ শিবিরে পাঠানোর খবর পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ৩০ দিনের সময়সীমা কার্যত একটি ‘ডিপোর্টেশন ডেডলাইন’, যার মাধ্যমে বহু অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের অবস্থান
ঢাকা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্দেশনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অতীতে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী কেউ বাংলাদেশি হলে, যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, “এই ইস্যুটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতকে অবশ্যই যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”
মানবাধিকার উদ্বেগ
বহিষ্কারের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অনেক অভিবাসী বিশেষ করে রোহিঙ্গারা যুদ্ধ ও নিপীড়নের হাত থেকে পালিয়ে এসেছেন। তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হলে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন হতে পারে।
ভারতের অভিবাসন নীতিতে এক নতুন কঠোরতার ইঙ্গিত স্পষ্ট। পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এই যাচাই শেষে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—যদি বড় পরিসরে বহিষ্কার শুরু হয়, তবে তা উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে।