অভিবাসী বিতাড়ন নিয়ে আদালতের বারবার হুঁশিয়ারি, চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন

বিশ্ব ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ত্বরিত বিতাড়ন কার্যক্রমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একাধিকবার আদালতের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। একের পর এক মামলায় আদালতের রায়ে স্পষ্ট বলা হচ্ছে—কোনো অভিবাসীকে বিতাড়নের আগে তাঁকে আইনি চ্যালেঞ্জের সুযোগ দিতে হবে, যা ‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার’ হিসেবে বিবেচিত।

বিতাড়নের আগ্রাসী নীতিতে আদালতের প্রতিবাদ

নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন বিতাড়ন কার্যক্রমে ত্বরিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে—যেখানে অভিবাসীরা নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ পাচ্ছেন না। কিন্তু প্রতিটি মামলাতেই আদালত বলছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া বিতাড়ন অসাংবিধানিক।

টেক্সাসে ভেনেজুয়েলার একদল অভিবাসীকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়ার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করে।

বিচারকরা তাদের রায়ে লিখেছেন—“বিতাড়নের মাত্র এক দিন আগে নোটিশ, যথাযথ আইনি নির্দেশনার অনুপস্থিতি, এটি ন্যূনতম সাংবিধানিক মানদণ্ডও পূরণ করে না।”

হার্ভার্ড ল স্কুলের সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল ক্লারম্যান বলেন, “যে নীতিটি বলছে, কাউকে জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার আগে তাকে আইনি প্রতিরক্ষার সুযোগ দিতে হবে—সেই মৌলিক নীতির পক্ষেই দাঁড়িয়েছে আদালত। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিগনাল।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সাংবিধানিক লঙ্ঘন না করাই শ্রেয় হতো প্রশাসনের পক্ষে।”

ট্রাম্প ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমাদের এখানে অবৈধভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আছে। আমরা কি সবাইকে বিচার করব?”

তার উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার জানিয়েছেন, হেবিয়াস কর্পাস রিট (অবৈধ আটকের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অধিকার) স্থগিত করার বিষয়টি প্রশাসন বিবেচনা করছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী হেবিয়াস কর্পাস হলো এক ব্যক্তিকে আটকের যৌক্তিকতা যাচাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াইট হাউজের এই রিট স্থগিত করার আইনগত ক্ষমতা নেই।

ট্রাম্প প্রশাসন ১৭৯৮ সালের Alien Enemies Act ব্যবহারের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের বিতাড়ন করতে চেয়েছিল। এই আইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি, জার্মান ও ইতালীয়দের ফেরত পাঠাতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

বর্তমানে এই আইনের অপব্যবহার নিয়ে অন্তত ১০টি মামলা আদালতে চলমান।

বিচারকদের পর্যবেক্ষণ, “ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনকে অতিরঞ্জিতভাবে ব্যবহার করছে।”

এই বিতর্কে স্পষ্ট বিভাজন দেখা গেছে—আদালত: সংবিধানসম্মত ন্যূনতম প্রক্রিয়া রক্ষা চাই। প্রশাসন: নির্বাহী আদেশে ত্বরিত বিতাড়ন সম্ভব। নিরাপত্তা ও অভিবাসন সংকটে মানবিক দিক অবহেলিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক মানবাধিকার সংস্থা।

ট্রাম্প প্রশাসনের বিতাড়ন নীতিতে সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য ফেডারেল আদালতের রায় স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, “অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, কিন্তু তা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে।”

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আরও আইনি চ্যালেঞ্জ আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।