ভারতের নতুন মহাসড়ক, লক্ষ্য বাংলাদেশের বিকল্প

ড. ইউনূসের মন্তব্যে সাড়া ভারত সরকারের, আসাম-শিলংয়ে ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন মহাসড়ক প্রকল্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় বড়সড় প্রভাব ফেলেছে।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করেই যুক্ত করতে এবার ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপি ব্যয়ে নতুন এক মহাসড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।

ড. ইউনূসের মন্তব্য ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

গত মার্চে চীন সফরে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর তাদের নির্ভরতা অপরিহার্য। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। এই বক্তব্য ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কাঁপন তোলে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL) শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিমি দীর্ঘ চার লেনবিশিষ্ট দ্রুতগতির মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়। এটি হবে উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

মিয়ানমার হয়ে বিকল্প সংযোগ তৈরির কৌশল

শুধু এই মহাসড়ক নয়, বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারকেও ব্যবহার করার কৌশলে এগোচ্ছে ভারত। এ লক্ষ্যে ‘কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’-এ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে মিয়ানমারের সিত্তে নদী বন্দর এবং সেখান থেকে পালেতওয়া হয়ে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা হবে।

এই করিডরটি তৈরি হলে কলকাতা এবং ভিজাগ বন্দর থেকে পণ্য সরাসরি উত্তরপূর্বাঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব হবে, যার ফলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড বা সমুদ্রসীমা ব্যবহার না করেও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে মূল ভূখণ্ড।

কৌশলগত গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

নতুন মহাসড়কটি শুধু অবকাঠামোগত প্রকল্প নয়, এটি কৌশলগতভাবে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিলচর হচ্ছে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বারাক উপত্যকার প্রবেশদ্বার। ফলে এই এক্সপ্রেসওয়ে পুরো অঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে না। পাহাড়ি অঞ্চলে মহাসড়ক নির্মাণের সময় ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক বাধা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত ৩০ এপ্রিল এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নের পথে।

ড. ইউনূসের কৌশলগত পর্যবেক্ষণ যে প্রতিবেশী ভারতের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো পরিকল্পনায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে, সেটি এই প্রকল্প থেকেই স্পষ্ট। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আবারও উঠে এলো এই ঘটনায়।