কাতার–যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার কোটি ডলারের জেট চুক্তি
বিশ্ব ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০ হাজার কোটি ডলারের বিশাল অঙ্কের চুক্তিতে ১৬০টি বোয়িং জেট কিনছে কাতার। এই চুক্তির মাধ্যমে কাতার এয়ারওয়েজ তার বিমানবহরকে আরও আধুনিক ও সক্ষম করে তুলতে যাচ্ছে।
বুধবার (১৪ মে) কাতারে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির মধ্যে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
কাতারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্পকে রাজকীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিমানবন্দরে কাতারের আমির নিজেই তাকে স্বাগত জানান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ার ফোর্স ওয়ানকে কাতারের যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন গার্ড দিয়ে নিয়ে আসে। এরপর লুসাইল প্রাসাদে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এই বিশাল বিমান চুক্তিসহ বিভিন্ন কৌশলগত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
ট্রাম্পকে বোয়িং জেট উপহার
চুক্তির পাশাপাশি আলোচনায় উঠে এসেছে কাতারের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭ বিমান উপহার দেওয়ার বিষয়টি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বোয়িং-এর তৈরি এই বিমানটিতে কিছু পরিবর্তন এনে অস্থায়ীভাবে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “কেন আমি উপহার গ্রহণ করব না? আমরা তো অন্যদের দিচ্ছি। এটি একটি স্বচ্ছ এবং প্রকাশ্য লেনদেন।” তিনি আরও বলেন, “৪০ বছরের পুরোনো বিমানের জায়গায় নতুন একটি বিমান আমাদের সহায়তা করবে। যখন এটি প্রস্তুত হবে, সেটা হবে চমৎকার।”
সামরিক কৌশল বিশ্লেষকদের মতে, এই উপহার একদিকে যেমন ওয়াশিংটন-দোহা সম্পর্ককে দৃঢ় করবে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রভাবকেও আরও সম্প্রসারিত করবে।
- কাতার ২০ হাজার কোটি ডলারে ১৬০টি বোয়িং জেট কিনছে
- ট্রাম্পকে উপহার দেওয়া হচ্ছে বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭
- সিরিয়াকে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে পাঁচ শর্ত
- ট্রাম্প বলছেন: “আমি কেন উপহার নেব না?”
- ওয়াশিংটন-দোহা সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে
সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়াকে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লিয়াভিট জানিয়েছেন, এই নির্দেশনাগুলো হলো—
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা, সব বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সিরিয়া ছাড়তে বলা, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করা, কথিত আইএসের পুনরুত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আইএস সংশ্লিষ্ট ডিটেনশন সেন্টারগুলোর দায়িত্ব নেওয়া।
ট্রাম্প বলেন, “সিরিয়াকে সন্ত্রাসবাদ দূর করতে হবে এবং শান্তির পথে আসতে হবে। আমি ইরানের সঙ্গেও আলোচনা করতে রাজি, তবে তাদের সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র রাখা যাবে না।”
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ও ট্রাম্প কূটনীতি
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কৌশল পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত দেয়। কাতারের সঙ্গে এত বড় একটি বিমান ক্রয়চুক্তি এবং সিরিয়ার প্রতি চাপ প্রয়োগ, উভয় ঘটনাই ইসরায়েলকে ঘিরে একটি নতুন আঞ্চলিক অক্ষ তৈরির প্রয়াস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোয়িং-এর চুক্তি কাতারের বাণিজ্যিক কৌশলের অংশ হলেও, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সীমারেখা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।