আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর ধরপাকড় শুরু

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।

নিষিদ্ধ ঘোষণা

২০২৫ সালের ১০ মে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা এবং সেই সময়ে সংঘটিত সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওই সময়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

আইনি ভিত্তি ও প্রজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এবং সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর আওতায় নেওয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনে দলটির সব ধরনের অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ, মিছিল, প্রচারণা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং আন্দোলনের কর্মী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

ধরপাকড় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নিষিদ্ধ ঘোষণার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় দলটির কার্যালয় ও নেতাদের বাসভবনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালালে গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আওয়ামী লীগের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবি জানিয়ে দলটি বলেছে, যে ফ্যাসিবাদের পতন ২০২৪ সালে হয়েছে, তা আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই।”

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলটির নেতারা এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন বলে জানা গেছে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার পরবর্তী প্রভাব এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে সাধারণ জনগণ ও বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।