আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ: সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সকল ধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার (১২ মে) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রজ্ঞাপনটি স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।

নিষেধাজ্ঞার কারণ

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সরকার গঠন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন পর্যন্ত দলটি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো বিরোধী দল, ভিন্নমতের মানুষ ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে “গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ”সহ নানা ধরনের নিপীড়ন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।

বিশেষভাবে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজ, বেআইনি আটক ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে দাবি করা হয়েছে।

বিচারাধীন মামলা ও জাতীয় নিরাপত্তা

বর্তমানে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের ফৌজদারি আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সরকার আশঙ্কা করছে, দলটির কার্যক্রম চালু থাকলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে, সাক্ষীদের মনে ভীতি তৈরি হবে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।

এছাড়া, ৫ আগস্টের পরেও দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার, উসকানিমূলক মিছিল, বিদেশি মাটি থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরাধমূলক বক্তব্য, সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধনের পরিকল্পনা এবং বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত কর্মকাণ্ড ও প্রমাণের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এর আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ ঘোষিত কার্যক্রম

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে—যেকোনো মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজন, অনলাইন, গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, সংগঠন পরিচালনা সংক্রান্ত যেকোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার সহিংসতা ও দমন-পীড়নের বিষয়গুলো তদন্ত করছে।

এই প্রজ্ঞাপন দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করল, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল নজির হয়ে থাকবে।