পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে শ্রম সংস্কার আলোচনা
পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে বৈঠক
টুইট ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সোমবার (১২ মে) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-সহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে তিনি গত আট মাসে বাংলাদেশে শ্রম খাতে নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।
লুৎফে সিদ্দিকী জানান, “জুলাই ২০২৪-এর পর থেকে আমরা শ্রম সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। আইএলও-র রোডম্যাপ কেবল দিকনির্দেশনা নয়, এটি আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা এই প্রক্রিয়াকে সফল করতে সময়, শ্রম ও সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি।”
বৈঠকে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা। তিনি শ্রম উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন-এর সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন, যিনি ত্রিপক্ষীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান জানান, “২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।”
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুয়োমো পউটিয়ানেন বলেন, “আমরা এখন বাংলাদেশ শ্রম আইনকে হালনাগাদ করার চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই প্রক্রিয়াটি যেন দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে এবং শ্রমিকদের প্রকৃত সুরক্ষা দেয়, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী জানান, “আমরা আইনি সংস্কারে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।”
পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া ও পরামর্শ
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, “এটি একটি নজিরবিহীন প্রক্রিয়া। আমরা লক্ষ্য করছি সামাজিক সংলাপ হয়েছে এবং দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া আইন দ্রুত দেখতে চাই এবং বাস্তব পর্যায়ে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করব। এর ফলাফল ইইউ বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, “আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে গতি ও উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি। তবে আগের অধীনে সংঘটিত লঙ্ঘনগুলোর জন্য জবাবদিহিতাও দেখতে চাই।”
কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত করা কাজের প্রশংসা করি এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, “বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ অবশ্যই শক্তিশালী শ্রমমান দ্বারা সমর্থিত হওয়া উচিত। আমি অন্যদের মতই অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।”
লুৎফে সিদ্দিকী কূটনীতিকদের জানান, তিনি স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছেন। সেখানে অতীত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত মামলার পর্যালোচনা, আদালতের জট দূর করতে বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প পদ্ধতি এবং শ্রম পরিদর্শন বিভাগে জনবল সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, “এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। শ্রম অধিকার এখন বাজার প্রবেশাধিকার, বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং এমনকি মার্কিন শুল্কনীতির সঙ্গেও সম্পর্কিত। সেই অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে।”
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকরা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে শ্রম সংস্কার ও জবাবদিহিতা অগ্রাধিকার পেতে হবে বলে মত দেন এবং বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “জুলাই আন্দোলন আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা সঠিক কাজটি করার জন্য সকলের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা আইএলও গভার্নিং বোর্ডে এই প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তির পথে রয়েছি।”