যুদ্ধের মাঝে পাকিস্তান-ইতালির ‘মাইগ্রেশন ডিপ্লোম্যাসি’—কূটনীতিতে নতুন মোড়
পাক-ভারত উত্তেজনায় ইতালির উদ্বেগ, সংঘাত প্রশমনের আহ্বান
বিশ্ব ডেস্ক: ভারতের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও আক্রমণকে কেন্দ্র করে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাত্তেও পিয়ানতেদোসি আজ বুধবার (৭ মে) পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেনেটর মোহাম্মদ ইসহাক ডারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার ভারতের ‘অবৈধ ও উস্কানিমূলক’ হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই হামলা আমাদের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন এবং এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা। এতে নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যা একটি গুরুতর পরিস্থিতি এবং পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।”
ইতালির পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মন্ত্রী পিয়ানতেদোসি বলেন, “নিরীহ মানুষের প্রাণহানি দুঃখজনক। এই পরিস্থিতি উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ এর ভূরাজনৈতিক প্রভাব অনেক বিস্তৃত।”
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উচ্চশিক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মতো খাতে যৌথ কাজের অগ্রগতির কথা বলা হয়।
বিশেষ করে পাকিস্তান ও ইতালির মধ্যে নতুন করে সই হওয়া ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড লেবার মোবিলিটি’ সমঝোতা স্মারক (MoU)–কে দুই পক্ষই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, উভয় দেশ আগামী দিনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
১. কূটনৈতিক ভারসাম্য ও বন্ধুত্বের বার্তা:
পাকিস্তান এমন এক সময়ে এই চুক্তি করেছে, যখন ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি চায়। ইতালির সঙ্গে চুক্তি সেই কৌশলগত কূটনীতির অংশ, যাতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মিত্রতা জোরদার করছে।
২. যুদ্ধ ও শান্তির দ্বৈত বার্তা:
যখন পাকিস্তান একদিকে প্রতিরোধের প্রস্তুতির কথা বলছে, অন্যদিকে ইতালির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ বিনিময়ের চুক্তি করে দেখাচ্ছে, তারা একান্তই যুদ্ধ চায় না—বরং উন্নয়নমুখী সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী।
৩. ইউরোপীয় সমর্থন জোরদার:
ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এই চুক্তি সেই অঞ্চলে পাকিস্তানের অবস্থান আরও শক্ত করতে পারে এবং ভারতবিরোধী বিবৃতিতে ইউরোপে নৈতিক সমর্থনের পথ তৈরি করে।
৪. অভিবাসন ও শ্রমবাজারে প্রস্তুতি:
এই সমঝোতা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ভারসাম্য দিতে সাহায্য করতে পারে। যুদ্ধাবস্থার প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ চাপে থাকা নাগরিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করা সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ।
এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক বা সামাজিক নয়, বরং যুদ্ধকালীন কূটনৈতিক কৌশলের অংশ—যেখানে পাকিস্তান নিজেকে শান্তিকামী, উন্নয়নমুখী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরছে।