ভারতের সর্বাত্মক নিরাপত্তা মহড়া: যুদ্ধ নয়, প্রস্তুতির বার্তা দিল ভারত?

টুইট প্রতিবেদন: পেহেলগাম ইস্যু এবং সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই ৫৪ বছর পর ভারতের ২৪৪টি জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক বিশাল আকারের জাতীয় নিরাপত্তা মহড়া (সিভিল ডিফেন্স ড্রিল)। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ওয়ার্ডেন, এনসিসি, এনএসএস, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা স্তরের সাধারণ মানুষ।

কেন এই মহড়া?

সর্বশেষ এমন বড় আকারের নিরাপত্তা মহড়া হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারপর ২০২৫ সালের ৭ মে আবারও এই মহড়ার আয়োজন হচ্ছে, যখন পেহেলগাম এলাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে এবং সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান গোলাগুলি প্রায় নিয়মিত ঘটনা।

ভারত সরকার এই মহড়াকে সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে “মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত প্রস্তুতি” হিসেবে চিহ্নিত করছে। সাইরেন, ব্ল্যাকআউট, হটলাইন, কন্ট্রোল রুম, আগুন লাগলে করণীয়, উদ্ধার অভিযান—সব কিছুই মহড়ার আওতায় পড়েছে।

মহড়ায় কী থাকবে?

বিমান হামলার সাইরেন শোনা গেলে করণীয়

ব্ল্যাকআউট পরিস্থিতিতে কীভাবে ঘরবাড়ি ও অফিস প্রস্তুত করতে হবে

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়

আগুন লাগলে এবং বোমা হামলার পর উদ্ধার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি

সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার অনুশীলন

সামরিক বিশ্লেষকদের মত

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে (DW) বলেন, “১৯৬২ সালে আসামে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় এমন মহড়া হয়েছিল। এতে সাধারণ মানুষকেও প্রস্তুত থাকতে শেখানো হয়। এটি যুদ্ধ নয়, বরং যুদ্ধের সময় কী করতে হবে তা শেখার একটি মহড়া।”

সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা ও মরিশাসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা মানসিক প্রস্তুতির অংশ। যাতে মানুষ নিজের ও সমাজের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকে। মহড়ার উদ্দেশ্য একটাই—প্রস্তুতি। যুদ্ধ শুরু হবে, এমন কোনো বার্তা নয়।”

অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কে পি ত্যাগী বলেন, “এটা কেবলমাত্র ‘যদি কখনো যুদ্ধ হয়’—সেই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সীমান্তে গোলাগুলি এবং পেহেলগামে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছে ভারত। এর জবাবে বিএসএফ (সীমান্তরক্ষী বাহিনী) প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

ভারতের এই প্রস্তুতিমূলক মহড়া একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু প্রয়োজনে প্রস্তুত আছি।” এই উদ্যোগ যুদ্ধের ইঙ্গিত নয়, বরং জনসচেতনতা বৃদ্ধি, জরুরি প্রতিক্রিয়া দক্ষতা এবং জাতীয় সুরক্ষা কাঠামোকে গতিশীল করার একটি প্রয়াস বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।