চার মাস পর লন্ডন থেকে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন: “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ”— বলছেন মির্জা ফখরুল
বদিউল আলম লিংকন: চার মাসের দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফেরেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ।
যাত্রাপথ ও নিরাপত্তা
খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সোমবার (৫ মে) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে দোহায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি নেয় এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংগ্রহের পর ঢাকার উদ্দেশে পুনরায় যাত্রা করে।
তার আগমনে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গুলশান থেকে শুরু করে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত পুরো রুটে নেয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট নির্দেশনাও জারি করেছে।
দলীয় প্রস্তুতি ও অবস্থান নির্ধারণ
বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক অবস্থান নেন। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী:
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি: বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়েন হোটেল পর্যন্ত।
ছাত্রদল: লা মেরিডিয়েন হোটেল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত।
যুবদল: খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি: র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত।
স্বেচ্ছাসেবক দল: আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত।
কৃষক দল: বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত।
শ্রমিক দল: কাকলী মোড় থেকে শেরাটন হোটেল পর্যন্ত।
অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন: শেরাটন হোটেল থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত।
মহিলা দল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা গুলশান এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, নেতা-কর্মীরা রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন, কারো মোটরসাইকেল বহর বা গাড়ির পেছনে পদচারণার অনুমতি নেই। বিমানবন্দর বা গুলশানের বাসভবনেও কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য তাকে বারবার বিদেশে নেওয়ার আবেদন করা হলেও অতীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তা নাকচ করে। এতে তার চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয় বলে দলটির অভিযোগ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আইনি লড়াই
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়ার আইনি অবস্থান আরও দৃঢ় হয়। বর্তমানে তিনি সব মামলায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চ আদালত ইতোমধ্যেই মন্তব্য করেছে, তার বিরুদ্ধে আগের সরকারের সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো ছিল হয়রানিমূলক।
রাজনৈতিক বার্তা
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্য, “খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন জনগণের বিজয়ের প্রতীক।”
এই ফিরে আসা কেবল একজন নেত্রীর শারীরিক চিকিৎসা শেষে ঘরে ফেরা নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, যেখানে বাংলাদেশের আগামী রাজনৈতিক পথরেখা নতুন মোড় নিতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।