ভারতে ৭১’র পর প্রথম যুদ্ধ মহড়া

  • কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সম্ভাবনার দিকে?
  • যুদ্ধের শঙ্কা: ৭১’র পর প্রথম ভারতের নিরাপত্তা মহড়া, চরম উত্তেজনার মধ্যে কড়া বার্তা মোদির।

বিশ্ব ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের প্রাণহানির পর উপমহাদেশে আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা ১১ রাত ধরে ভারত ও পাকিস্তান বাহিনীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি চলছে। এমন উত্তেজনাকর প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারত সরকার দেশজুড়ে যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা এই পরিস্থিতির গুরুত্ব এবং গভীরতাকে নির্দেশ করে।

৭১ সালের পর প্রথম ‘ওয়ার ড্রিল’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ মে থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি হিসেবে নিরাপত্তা মহড়া পরিচালিত হবে। এতে সাধারণ জনগণকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা জরুরি অবস্থায় সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
এ ধরনের সর্বজনীন প্রস্তুতি ভারতের ইতিহাসে বিরল। সর্বশেষ এমন মহড়া হয়েছিল ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে, যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ।

কী কী থাকছে মহড়ায়?

ভারত সরকারের নির্দেশনায় যেসব প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে, তা মূলত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার নানা দিককে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে রয়েছে; বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজলে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের আত্মরক্ষামূলক অনুশীলন, ব্ল্যাকআউটের অনুশীলন ও আচরণবিধি, যুদ্ধে স্থানচ্যুতি হলে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার কৌশল, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা পরিকল্পনা।

সিভিল ডিফেন্স ও উদ্ধার অভিযানের মহড়া

ইতোমধ্যে পাঞ্জাবের ফিরোজাবাদে মঙ্গলবার রাতে আধা ঘণ্টার একটি ব্ল্যাকআউট মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সেনা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জনগণকে প্রস্তুতির অনুশীলন করিয়েছে।

মোদির কড়া বার্তা ও পালটা আক্রমণের প্রস্তুতি

কাশ্মীর হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মোদি জানিয়েছেন, যারা এই হামলার পেছনে রয়েছে, তাদের “কল্পনাতীত শাস্তি” পেতে হবে।

মোদি ইতোমধ্যেই দেশের তিন বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পালটা আক্রমণের পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। এর অর্থ, ভারত যে কোনো মুহূর্তে পাকিস্তান ঘাঁটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের উত্তেজনা যখনই বাড়ে, তখনই গোটা দক্ষিণ এশিয়া এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। দুই দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে—এই বাস্তবতায় যুদ্ধের আশঙ্কা শুধু সীমান্ত নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ পুরোপুরি বন্ধ এবং সীমান্তে সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও বাহিনী সমাবেশও বাড়ানো হয়েছে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিচ্ছে।

কাশ্মীরের সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে এক নতুন সংকটময় অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভারত সরকারের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি এবং মোদির কড়া ভাষায় দেওয়া প্রতিক্রিয়া, দুই দেশকে মুখোমুখি সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে কিনা, তা জানতে বিশ্বজুড়ে নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ার দিকে।