চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে

টুইট ডেস্ক: চট্টগ্রামের একটি আদালত সম্প্রতি হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে।

এই আদেশটি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে প্রদান করেন, যেখানে পুলিশ দাসকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে।

এর আগে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে, দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযোগের পেছনে ছিল চট্টগ্রামে একটি হিন্দু অধিকার সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের ঘটনা, যা দেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সহিংস বিক্ষোভ হয়, যেখানে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দাসকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে, যা আদালত মঞ্জুর করে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও হত্যা মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (পূর্ব নাম: চন্দন কুমার ধর) একজন বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও সমাজকর্মী। তিনি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এবং পূর্বে ইসকন (ISKCON) বাংলাদেশের সদস্য ছিলেন।

তবে, সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা মামলা, শিশু নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি।

১. রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে একটি সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৫ নভেম্বর তাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তাকে জামিন প্রদান করে।

২. আইনজীবী হত্যা মামলা

চট্টগ্রামে তার জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর, আদালত প্রাঙ্গণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এই ঘটনার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

৩. শিশু নির্যাতনের অভিযোগ

২০২৩ সালে, ইসকনের আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা কার্যালয় (CPO) চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলাকালীন তাকে সংগঠন থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে, তিনি নির্দেশনা না মানায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তাকে ইসকন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

৪. সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি

চট্টগ্রামের হজারি লেইন এলাকায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে সংঘটিত সহিংসতায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নাম উঠে আসে, যেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপর অ্যাসিড হামলার অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।

৫. সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের মালিকানাধীন একটি পুকুর দখলের অভিযোগও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে।

এই অভিযোগগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন এবং বিচারাধীন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের সরকার ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা জনগনের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।