রাজশাহী-১: বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আগাম নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি, তবে ডিসেম্বরকে টার্গেট করে দলগুলো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

এই আসনে সবচেয়ে বেশি তৎপর দেখা যাচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তবে তাঁদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও গ্রুপিং রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আর এ সযোগ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির দ্বন্দ্বের আড়ালে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে জামায়াতের প্রার্থী বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

বিএরপির দলীয় একাধিক সূত্রেমতে, রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির ছয়জন নেতার নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় এসেছে। এরা হলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন, শিল্পপতি ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সাজেদুর রহমান মার্কনি এবং জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রয়াত মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই। তবে সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সহকর্মীদের কর্মসূচিতে হামলা ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তানোর উপজেলায় তার অনুসারিদের মধ্যে হানাহানিতে বিএনপির দুইজন ত্যাগী নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়াও সম্প্রতি তানোরে বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানুল ইসলাম তারেকের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ রয়েছে শরিফ উদ্দিনের অনুসারিদের বিরুদ্ধে।

এ সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে শরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁরা দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার চালাচ্ছেন যাতে শরিফ উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পান। তাঁদের দাবি, এমন প্রার্থী মনোনয়ন পেলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এতে সুবিধা পাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী।

অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।

তিনি জানান, ‘‘দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মনোনয়ন চাওয়া সবার অধিকার। তবে নিজের মধ্যে হানাহানি এবং অন্যের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’’

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ প্রচারে তিনি দুটি উপজেলায় সভা-সমাবেশ, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে একাধিকবার তিনি ও তাঁর সমর্থকরা হামলার শিকার হয়েছেন।

সাবেক মহানগর বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলেন, ‘‘১৯৯৬ ও ২০০৮ সালেও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারো মনোনয়ন চাইছি। আশা করি, ক্লিন ইমেজ বিবেচনায় দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘২০০৮ সালের আগে সাতটি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। যার মধ্যে দুইটি মামলায় সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সঙ্গে আসামী ছিলাম। এবার রাজনৈতিক হয়রানি-নির্যাতন বিবেচনায় নিয়ে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।”

কে এম জুয়েল অভিযোগ,

‘‘শরিফ উদ্দিনের অনুসারীদের হামলায় তানোরে দলের দুইজন ত্যাগী নেতা নিহত হয়েছেন। বিষয়টি হাই কমান্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। গোদাগাড়ী-তানোরবাসীর প্রত্যাশা কোন বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব দিবে না।’’

জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব বলেন, ‘‘দল এবার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী চাইছে। যারা দীর্ঘদিন এলাকায় আসেননি বা দলের কার্যক্রমে অংশ নেননি, তাঁদের প্রার্থী করা হলে তৃণমূল ক্ষুব্ধ হবে। তাদের প্রত্যাশা দলের দুর্দিনে যারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে ছিল তারাই যেন মনোনয়ন পান।’’

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমানও রাজশাহী-১ আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির রাজশাহী জেলা নেতা সামসুদ্দীন মন্ডল জানিয়েছেন, ‘‘দল আমাকে প্রার্থী করতে পারে। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হয়, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’’

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো তৎপরতা এখনো এ আসনে দৃশ্যমান নয়, যদিও গত কয়েকটি নির্বাচনে এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীই মনোনয়ন পেয়েছিল।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও জামায়াতে ইসলামীর জোরাল তৎপরতা এবং আওয়ামী লীগের নীরবতা- সব মিলিয়ে রাজশাহী-১ আসনটি জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।