বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে ভারত স্থাপন করছে ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’
টুইট ডেস্ক: ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদারে বড় ধরনের পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ স্থাপন করতে যাচ্ছে দেশটি। একইসঙ্গে গঠিত হচ্ছে ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন, যাতে অন্তর্ভুক্ত হবেন প্রায় ১৭,০০০ নতুন জওয়ান।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই পরিকল্পনাটি ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়াও চলমান। অনুমোদন পেলে এটি হবে বিএসএফ-এর ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ সম্প্রসারণ।
পাকিস্তান সীমান্তে ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’টি স্থাপন করা হবে জম্মুতে। এখানে বিএসএফের অধীনে ইতোমধ্যেই চারটি সেক্টর রয়েছে—রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগর। এগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপন হলে এই অঞ্চলগুলোর তদারকি আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য হেডকোয়ার্টারটি স্থাপন করা হবে ভারতের মিজোরামে। মিজোরাম-কাছার ফ্রন্টিয়ারের অধীনে বর্তমানে শিলচর, আইজল ও মণিপুর সেক্টর রয়েছে। নতুন হেডকোয়ার্টার এই এলাকাগুলোর অপারেশন ও সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে বিএসএফ-এর রয়েছে ১৯৩টি ব্যাটালিয়ন, প্রত্যেকটিতে গড়ে এক হাজারের বেশি সদস্য। নতুন ১৬টি ব্যাটালিয়ন যুক্ত হলে মোট সদস্য সংখ্যা বাড়বে প্রায় ১৭ হাজার। নারী ও পুরুষ সদস্যদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে, যার পরপরই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ব্যাটালিয়নগুলো আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে গঠিত ও কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগ এমন সময় নেওয়া হচ্ছে যখন ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ একাধিক ফ্রন্টে বাড়ছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় একাধিক ভারতীয় সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখা গেছে— যার মধ্যে রয়েছে সামরিক সফর, বাণিজ্যিক চুক্তি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়। এই ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ সীমান্তও ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো মনে করছে, প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সীমান্তে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। তাই এই ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ প্রকল্প সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দ্রুত ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়তা করবে।
নতুন হেডকোয়ার্টার ও ব্যাটালিয়ন গঠনের মাধ্যমে বিএসএফ শুধু তাদের কাঠামোগত শক্তি বৃদ্ধি করছে না, বরং ভারত সরকারের সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের এই যুগে এ ধরনের উদ্যোগ প্রতিরক্ষা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।