তথ্য লঙ্ঘনে টিকটককে ৬০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা
টুইট ডেস্ক : ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটককে ৬০০ মিলিয়ন ডলার (৫৩০ মিলিয়ন ইউরো) জরিমানা করেছে আয়ারল্যান্ডের তথ্য সুরক্ষা কমিশন (ডিপিসি)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ তথ্য সুরক্ষা বিধিমালা (জিডিপিআর) লঙ্ঘনের অভিযোগে শুক্রবার এই জরিমানার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ডিপিসির তদন্তে উঠে এসেছে, টিকটক ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য চীনে স্থানান্তর করেছে এবং চীনে অবস্থানরত কর্মীরা ওই তথ্য দূরবর্তীভাবে অ্যাক্সেস করেছেন। যদিও আগে প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি অস্বীকার করেছিল, ২০২1 সালের পর তা স্বীকার করে এবং জানায় তথ্যগুলো পরে মুছে ফেলা হয়েছে।
ডিপিসির উপকমিশনার গ্রাহাম ডয়েল বলেন, “টিকটক প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে ইউরোপীয় নাগরিকদের তথ্য চীনে পাঠানোর পর তা ইউরোপীয় নিরাপত্তা মান বজায় রেখে সংরক্ষিত ছিল।” তিনি আরও বলেন, “চীনা আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ চাইলে এসব তথ্য চেয়ে বসতে পারে, এমন সম্ভাবনাও টিকটক বিবেচনায় নেয়নি।”
ডিপিসি জানায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের এই তথ্যপ্রবাহের বিষয়ে স্বচ্ছভাবে কিছু জানায়নি। স্বচ্ছতার অভাবে অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা যুক্ত করা হয়েছে।
টিকটকের ইউরোপীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন গ্রাহন দাবি করেন, “চীনা কর্তৃপক্ষ কখনও ইউরোপীয় তথ্য চায়নি এবং আমরা তাদের কোনো তথ্য দেইনি। আমরা ডিপিসির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই এবং এর বিরুদ্ধে আপিল করব।”
আয়ারল্যান্ডে ইউরোপীয় সদরদপ্তর থাকায় দেশটির ডিপিসি মেটা, গুগল, এক্স (সাবেক টুইটার) সহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে।
ডিপিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিকটককে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, অন্যথায় চীনে তথ্য পাঠানো স্থগিত করা হবে।
এর আগেও, ২০২৩ সালে শিশুদের তথ্য ব্যবহারে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে টিকটককে ৩৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল।
এছাড়া, টিকটকের বিরুদ্ধে একাধিক দেশে সহিংস কনটেন্ট ছড়ানো, ভুল তথ্য প্রচার ও অস্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে পাকিস্তান, নেপাল ও ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়ায় প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ ছিল।
উল্লেখ্য, টিকটক ইউরোপে ‘ক্লোভার প্রকল্প’-এর মাধ্যমে ১২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করছে এবং দাবি করছে যে, ইউরোপীয় তথ্য প্রধানত নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত থাকে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটকের ওপর চাপ বাড়ছে। ২০২৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস একটি আইন পাস করে, যাতে বলা হয়—চীনা মালিকানাধীন মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স মার্কিন বাজারে টিকটক চালাতে চাইলে মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে বিক্রির সময়সীমা বাড়িয়ে ১৯ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন।