পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডারদের বিশেষ বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
বিশ্ব ডেস্ক: রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টারে (GHQ) শুক্রবার (২ মে) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান (COAS) জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, NI (M), এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হলো একটি বিশেষ কোর কমান্ডার কনফারেন্স (CCC)। বৈঠকে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তৃত পর্যালোচনা করা হয়।
ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামরিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব
ফোরামে চলমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয়, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান বিরোধ এবং দক্ষিণ এশীয় নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর জোর দেওয়া হয়। সেনাপ্রধান দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব, মনোবল ও প্রস্তুতির প্রশংসা করেন এবং সমস্ত ফ্রন্টে উচ্চ সতর্কতা ও সক্রিয় প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসন ও সীমান্তে হামলার নিন্দা ফোরাম ভারতীয় দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (IIOJK) সাম্প্রতিক পাহালগাম হামলার প্রেক্ষিতে ভারতীয় দমনমূলক তৎপরতা এবং নিরীহ সাধারণ জনগণের ওপর অত্যাচার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এছাড়া সীমান্ত রেখা (LoC) বরাবর ভারতীয় বাহিনীর অমানবিক ও উস্কানিমূলক হামলারও কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়। বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ড কেবল আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এবং এর যথাযথ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
রাজনৈতিক স্বার্থে সংকটের অপব্যবহার ও আগ্রাসী নীতি ফোরামে ভারতের ‘সংকট ব্যবস্থাপনার’ কৌশল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারত একটি পরিচিত ছক অনুসরণ করে থাকে—যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতাকে বাইরের হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা ঘটনার মতোই, এবার পাহালগাম হামলাকেও কাশ্মীরের স্থিতাবস্থাকে একতরফাভাবে বদলানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জলসম্পদ নিয়ে উদ্বেগ: সিন্দু পানি চুক্তির হুমকি ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, ভারত এখন সিন্দু পানি চুক্তিকে দুর্বল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে, যা পাকিস্তানের পানি অধিকার হরণ করার সামিল। এতে ২৪ কোটিরও বেশি পাকিস্তানির জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।
ভারতে রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাসের অভিযোগ ফোরাম আরও জানায়, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। এই রাষ্ট্রীয় মদদ আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করে এবং অগ্রহণযোগ্য।
শান্তির অঙ্গীকার, যুদ্ধের জবাব প্রস্তুত যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার যে কোনো চেষ্টাকে পাক সেনাবাহিনী কঠোরভাবে প্রতিহত করবে বলে জানানো হয়েছে। জাতির শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়নের পথে কেউই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। সেনাবাহিনী ও জনগণের একত্রে দেশ রক্ষার প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
সেনাপ্রধানের বার্তা জেনারেল আসিম মুনির কনফারেন্স শেষে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল, প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধ সক্ষমতা সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনগণের স্বপ্ন পূরণে কোনো আপোষ করা হবে না। তিনি জাতিকে আশ্বস্ত করেন, যে কোনো হুমকির মোকাবেলায় পাকিস্তান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
এই বিশেষ কোর কমান্ডার কনফারেন্সে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, পাকিস্তান কোনো উস্কানিতে পিছু হটবে না এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ দৃঢ়তা দেখাবে।
ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের প্রমাণ তুলে ধরার মাধ্যমে ফোরাম কূটনৈতিক এবং সামরিক উভয় পর্যায়েই দৃঢ় বার্তা দিয়েছে।