বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ

টুইট ডেস্ক: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত পণ্য পরিবহন এবং আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে। গত মাসে, বাংলাদেশ ভারত থেকে সড়কপথে সুতা আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপটি ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পর আসে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য সুতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়কপথে পরিবহন কঠোর হলেও, সমুদ্রপথ ও আকাশপথে এখনও সুতা আনা সম্ভব হলেও এসব রুট ধীর গতির এবং খরচ বেশি। ২০২৪ সালে ভারত বাংলাদেশে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের সুতা রপ্তানি করেছে, যার এক তৃতীয়াংশ ছিল সড়কপথে। এখন ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায়, পোশাক প্রস্তুতকারকরা তাদের পণ্য সড়কপথে ভারতের শহরগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোতে পাঠাতে পারছেন না। এর পরিবর্তে, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগছে।

এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান আনিস আহমেদ এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ভারতের রুট দিয়ে পণ্য দ্রুত পরিবহন সম্ভব হলেও, এখন তা সমুদ্রপথে পৌঁছানোর জন্য অনেক বেশি সময় নেয়, যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারকে বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, যেখানে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলকে ‘চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণ’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যটি ভারতীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যখন চীন বাংলাদেশের তিস্তা নদী প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই বাণিজ্যিক উত্তেজনা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণও এই সম্পর্কের আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন।

ভারতের পোশাক প্রস্তুতকারকরা বাংলাদেশের পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, ট্রানজিট সুবিধাগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।

এছাড়া, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও উত্তেজনা বাড়ছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, দুই দেশ যদি দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়, তবে তা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা উভয় পক্ষের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।