নসরুল হামিদের সম্পদ জব্দে রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির চ্যালেঞ্জ
টুইট প্রতিবেদন: রাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির গন্ধে আবদ্ধ। কখনো দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কখনো অস্বচ্ছ টেন্ডার, কখনো আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অসম চুক্তি—সবকিছুর ছায়ায় আজ বিদ্যুতের দাম ও জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে।
এরই মাঝে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ। আদালতের একের পর এক জব্দাদেশ প্রমাণ করে—দুর্নীতির এই স্তুপ ছিল সংগঠিত, পরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় লালিত।
গুলশানের ২০০ কোটি টাকার জমি, বিলাসবহুল গাড়ি, শতাধিক ব্যাংক হিসাব, বিদেশে যাত্রা নিষেধাজ্ঞা—এসব কিছু কি কেবল একজন প্রতিমন্ত্রীর “ব্যক্তিগত উদ্যোগ”? না কি এর পেছনে কাজ করেছে রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও প্রশাসনিক অসারতা? দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান হয়তো ন্যায়বিচারের দিকে এক ধাপ এগিয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এতোদিন এই সম্পদ কোথায় ছিল? কিভাবে নামজারিকৃত কোম্পানি দিয়ে জমি কেনা হলো? কীভাবে এনবিআর, দুদক কিংবা অন্য কোনো সংস্থার নজর এড়িয়ে গেল এসব অপকর্ম?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি যেন আর ব্যতিক্রম নয়, বরং সেটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা মানেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা—এই ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠা করে রাখা হয়েছে দশকের পর দশক। অথচ এই টাকা, এই সম্পদ জনগণের। একজন সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার পদ ব্যবহার করে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করলে, সেটি নিছক ব্যক্তিগত অপরাধ নয়—তা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই, নসরুল হামিদের স্ত্রী সীমা হামিদ ও ছেলে জারিফ হামিদের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা করেছে দুদক। পরিবারতন্ত্রের এই দুর্নীতির ছায়া আমাদের বলে দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ব্যক্তিগত সীমায় থাকেনি, তা পারিবারিক কাঠামোয় ছড়িয়ে পড়েছে।
নির্বাচিত সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি আনতে যদি এত প্রমাণ ও সময় লাগে, তবে সাধারণ আমজনতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির বিচার আদৌ কী হয়?
তাই সময় এসেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নয়, বরং ‘রিয়েল টলারেন্স জিরো’ প্রয়োগ করার।
দুদকের অনুসন্ধান ও আদালতের পদক্ষেপ অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু বিচার-প্রক্রিয়া যদি ধীরগতির হয়, প্রভাবশালীরা যদি বারবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায়, তবে তা দুর্নীতিবিরোধী যেকোনো অভিযানের অর্থহীনতা প্রমাণ করে। জনগণ এখন কেবল সম্পদ জব্দের খবর নয়—চায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা, চায় স্বচ্ছতা, চায় জবাবদিহি। কারণ, রাষ্ট্র কারো ব্যক্তিগত লুটপাটের জন্য নয়—রাষ্ট্র জনগণের জন্য।