দীপ্ত টিভির সংবাদ প্রচার বন্ধ, তিন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত: প্রশ্নের স্বাধীনতা না পেশাগত শৃঙ্খলাভঙ্গ?
নিজস্ব প্রতিবেদক: সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে প্রশ্ন করার জেরে দেশের দুইটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে দীপ্ত টেলিভিশনের সংবাদ সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।
চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত টেলিভিশনের মিজানুর রহমান ও মাহমুদ শাওন এবং এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি মো. ফজলে রাব্বি। পাশাপাশি, চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষও তাদের একজন প্রতিবেদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দীপ্ত টিভির স্ক্রলে জানানো হয়— ‘অনিবার্য কারণবশত দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’
চ্যানেল আই তাদের অফিসিয়াল পেজে জানায়— ‘সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিষয়ে তদন্ত শুরু ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’
এই ঘটনা নিয়ে দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং প্রশ্ন করার অধিকার হরণ করার শামিল। তারা মনে করেন, সাংবাদিকদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া সরকারের কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অধিকার হতে পারে, তবে প্রশ্ন করার অধিকার হরণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিপন্থী।
তবে একইসঙ্গে এটাও বলা জরুরি যে, সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সময় নিরপেক্ষতা, শালীনতা এবং প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখা উচিত। কারণ, পেশাগত আচরণে ব্যত্যয় ঘটলে তা গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা এবং দায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এবিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এক সাংবাদিক গণহত্যার পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি।
ঘটনাটি এখন জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাকি পেশাগত শৃঙ্খলার প্রশ্ন, তা নিয়ে সাংবাদিক মহলে আলোচনা চলছে।