যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ভারত: সংসদে প্রতিরক্ষা কমিটির জরুরি বৈঠক আজ
টুইট ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে গোলাগুলি। সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে।
টানা পাঁচ রাত গোলাগুলি
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে (DW) জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে প্রতিরাতেই কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাতে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১২টার পর শুরু হওয়া এই গুলি বিনিময় চলে ভোর পর্যন্ত। এখনো পর্যন্ত হতাহতের খবর না মিললেও আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ।
পাকিস্তানকে দায়ী করে পদক্ষেপের ঘোষণা ভারতের
পেহেলগামের ভয়াবহ হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। দেশটির সরকার একাধিক কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে থাকা সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য চুক্তি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করছে। পরবর্তীতে দু’দেশের সেনারা প্রতিরাতে সংঘর্ষে জড়ায়—বিশেষ করে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ সীমান্তে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পূর্ণ সমর্থন
এই চুক্তির পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ভারতের পাশে থাকার প্রত্যয় জানিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় সামরিক আধুনিকায়নে দুই দেশই সর্বাত্মক সহায়তা দেবে। ওয়াশিংটন ও তেলআবিব থেকে ভারতের প্রতি সমর্থনসূচক বার্তা এসেছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিল্লিতে ভারতের সংসদ ভবনের অ্যানেক্স ভবনে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক বসছে। সেখানে রাফাল চুক্তি ছাড়াও সীমান্ত পরিস্থিতি, পাকিস্তানের হুমকি, এবং কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সেনা মোতায়েন ও সামরিক প্রস্তুতি
সীমান্তজুড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতীয় সংবাদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, ভারত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনার পরপরই এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং নয়াদিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠান।
কূটনীতিকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ উত্তেজনা হ্রাসের জন্য নয় বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
কাশ্মীরে ধরপাকড় ও অভিযান
হামলার পর কাশ্মীরজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। অভিযানে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে ও রয়টার্স। ভারত দাবি করেছে, তারা হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া কাশ্মীরের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পানি ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন
এই উত্তেজনার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানি দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি
ভারতের এই সামরিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদে গভীর উদ্বেগ ও চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে উদ্বিগ্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলহামে পর্যটকদের ওপর হামলা এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিকে “উদ্বেগজনক সংকেত” হিসেবে দেখছে পাকিস্তান।
২৮ এপ্রিল বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “কাশ্মীরের হামলার পর ভারতের সামরিক অভিযান আসন্ন বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানও প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে, পাকিস্তান সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেবে।”
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকে যায়।