এনামুল হক দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা: কোম্পানির লেনদেনকে ব্যক্তিগত দেখানোর অভিযোগে বিতর্ক

টুইট ডেস্ক: রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক ও তার স্ত্রী তহুরা হকের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২,২৪২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।

তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই মামলার অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে — বিশেষ করে কোম্পানির ব্যাংক লেনদেনকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে দেখানোর বিষয়টি কেন্দ্র করে।

দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এনামুল হক ব্যক্তিগতভাবে ১৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ২২টি ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত ২,২৩৯ কোটি টাকার লেনদেন সন্দেহজনক বিবেচিত হয়েছে।

একইসঙ্গে তার স্ত্রী তহুরা হক ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়ে‌ছে।

তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম।

তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করছে, এনামুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বিপুল অঙ্কের ব্যাংক লেনদেন প্রকৃতপক্ষে ছিল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অংশ। কোম্পানির বৈধ আর্থিক লেনদেনকে ব্যক্তিগত আয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলে মামলার অঙ্ক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের উপস্থাপনা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্যক্তি ও কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের ব্যবধান আইনত স্পষ্ট। কোনো ব্যক্তি যদি কোম্পানির আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সম্পৃক্ত না হন, তাহলে সেই কোম্পানির লেনদেন ব্যক্তিগত অবৈধ সম্পদ হিসাবে গণ্য করা আইনের দৃষ্টিতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট আর্থিক উৎস ও ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ।

এক্ষেত্রে মামলার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে দুদকের পক্ষে প্রমাণের দক্ষতার ওপর — তারা কতটা পরিষ্কারভাবে দেখাতে পারে, এই বিপুল লেনদেনগুলো সরাসরি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ যদি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে এসব অর্থপ্রবাহ বৈধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে মামলার মূল অভিযোগ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিশ্বাসযোগ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির আর্থিক স্বার্থের ব্যবধান যথাযথভাবে বিচার ও তদন্ত করা জরুরি। নয়তো রাজনৈতিক বা প্রতিহিংসামূলক উদ্দেশ্যের অভিযোগে দুর্নীতি দমনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনামুল হক রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর আদাবর নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাবের একটি দল।

এখন দেখা যেতে পারে, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় এই মামলার আসল চিত্র কতটা উন্মোচিত হয়।