বগুড়া হচ্ছে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন

টুইট ডেস্ক: দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। অবশেষে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বগুড়া।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।

একের পর এক দাবি, অপেক্ষা আর প্রত্যাশার পর বগুড়া এখন এগোচ্ছে দেশের অন্যতম বড় শহর হিসেবে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশের দিকে।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও প্রক্রিয়া

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখার ১০ এপ্রিল ২০২৫ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধিমালা ২০১০-এর বিধি-৫-এর উপবিধি (২) অনুসারে নির্ধারিত মৌজাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠন করা হবে।

যদি কারও কোনো আপত্তি বা মতামত থাকে, তবে তা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করতে হবে। আপত্তির নিষ্পত্তি হবে ১৫ দিনের মধ্যে। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। বিভাগ যাচাই-বাছাই করে আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠনের অধ্যাদেশ জারি করবে।

ঐতিহাসিক পটভূমি

বগুড়া পৌরসভার ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো।
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভা ১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়।

২০০০ সালে এর আয়তন ছিল মাত্র ১৪.৭৬ বর্গকিলোমিটার। ২০০৪ সালে পৌরসভার আয়তন বাড়িয়ে ৬৯.৫৬ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করা হয়।

বর্তমানে পৌরসভাটি ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এবং এখানে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

বগুড়া জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পোন্নয়নে বগুড়ার ভূমিকা অপরিসীম। তাই আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

দাবির পেছনের গল্প

উন্নত নাগরিক সুবিধা, টেকসই অবকাঠামো এবং পরিকল্পিত নগরায়ণের স্বপ্ন বুকে নিয়ে বগুড়াবাসী বারবার এই দাবি তুলেছেন।

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জনগণের সেই প্রত্যাশা উপলব্ধি করে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা ও সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা এলো।

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

সিটি করপোরেশন মর্যাদা পাওয়ার ফলে বগুড়ায় নাগরিক সেবা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নগর ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে।
বিদ্যুৎ, পানি, সড়ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশন হওয়ায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগও বগুড়ায় বাড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী ধাপে আপত্তি নিষ্পত্তি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই-বাছাই শেষে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বগুড়া সিটি করপোরেশন’ নামে অধ্যাদেশ জারি করবে।

এরপর গঠিত হবে প্রশাসনিক কাঠামো, মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্বাচন হবে, এবং নগর ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি সিটি করপোরেশন কাঠামোয় চলবে।

বগুড়া এখন ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আধুনিক নগরায়ণের নতুন চিত্র নির্মাণের অপেক্ষায় পুরো শহরবাসী। এই পথচলা শুধু একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়; এটি বগুড়ার মানুষের স্বপ্নপূরণের শুরু।

সময়ের দাবি মেটাতে, উন্নত ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় বগুড়া এগিয়ে চলুক নব উদ্যমে।