মুর্শিদাবাদে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা: শুভেন্দু অধিকারীর সমবেদনা জ্ঞাপন
বিশ্ব ডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার শমসেরগঞ্জ থানার জাফরাবাদে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হিন্দু-বিরোধী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন হরগোবিন্দ দাস (৫৫) ও তাঁর পুত্র চন্দন দাস (২৬)। জানা যায়, ২৪ এপ্রিল রাতে দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিত হামলা চালায়।
ঘটনার দুই দিন পর, ২৬ এপ্রিল (শনিবার) দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নিহতদের বাসভবনে যান। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সফরের সময় পরিবারটির হাতে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের সন্তানদের ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যয়ের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“শোকাহত পরিবারটির চোখের জল আজ হিন্দু সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আমরা এই পরিবারের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।”
ঘটনার বিবরণ ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই ব্যক্তি কোনো সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন না। তাঁদের একমাত্র পরিচয় ছিল — তাঁরা হিন্দু ছিলেন।
পরিবারটি রাজ্য সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির ফলে হিন্দু সম্প্রদায় বারবার অবহেলিত হচ্ছে।
বিজেপি এই ঘটনাকে ‘হিন্দু গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বিজেপির ডাকে রাজ্যজুড়ে ‘হিন্দু শহীদ দিবস’ পালন করা হয়।
বিচার বিভাগের পদক্ষেপ
কলকাতা হাইকোর্ট, ২৫ এপ্রিল, একটি বিশেষ আদেশে মুর্শিদাবাদ জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী (BSF ও CRPF) মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, “জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠেছে, এবং রাজ্য প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও নাগরিক সংগঠন সরব হয়েছে। তাঁরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে এবং অবিলম্বে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শুভেন্দু অধিকারী বলেন,
“আজকের দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল, হিন্দু সমাজের ঐক্য ছাড়া কোনো সুরক্ষা নেই। আমরা শপথ নিচ্ছি, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়বো। হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই।
“আমরা মন্দিরগুলো আবার গড়ে তুলবো এবং হিন্দু ভাইবোনদের পুনর্বাসন করবো, রাজ্যের এই হিন্দু-বিরোধী সরকারের সাহায্য ছাড়াই।”
তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা হিন্দুদের জেহাদি হামলা থেকে রক্ষা করতে পারেনি, এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হয়েছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার সম্পর্কে তিনি তীব্র সমালোচনা করে বলেন,
“এই সরকার চরমপন্থী ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাজ্যে শান্তি ফেরাতে মমতা সরকারকে সরানো জরুরি।”
সূত্র: শুভেন্দু অধিকারীর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ (২৫ এপ্রিল ২০২৫)