রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহে ঝরছে আমের গুটি; শঙ্কায় চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে চলমান খরার প্রকোপে আমগাছে গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় চাষিদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। গাছভরা মুকুল আর গুটি দেখে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, সেটি এখন ফিকে হয়ে আসছে।

এ বছর জেলায় প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা ধরা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রাজশাহীর পবা, হরিয়ান, পারিলা, শ্যামপুর, বুধপাড়া-এমন নানা অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, আমগাছে এখন গুটি ঝরে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। আমচাষিরা বলছেন, গাছের প্রায় ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ থেকে গুটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহ এবং বৃষ্টিহীনতায় অনেক গুটিই এখন আর টিকছে না।

ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, তাপপ্রবাহের প্রভাবে আমের বোটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে গুটি ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় সেচ ও গায়ে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হলেও, প্রকৃতিতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পবার আমচাষি শামসুজ্জামান বলেন, “কালবৈশাখী ঝড় আগেও দেখেছি, কিন্তু খরার মধ্যে যদি ঝড় আসে তাহলে আমের বোটা আগেই শুকিয়ে যায়-তাতে ক্ষতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”

বাগান লিজ নিয়ে আমচাষে নামা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “মুকুল দেখে অনেক আশা করেছিলাম। ভাবছিলাম, এবার কিছু ঋণ শোধ করতে পারব। কিন্তু এখন গুটিগুলো ঝরে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করছি, তবু মনে হচ্ছে শেষ রক্ষা হবে না।”

ছোট গাছে পানি স্প্রে করে কোনোভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনি মিঞা। তবে বড় গাছগুলোতে পানি দিতে গিয়ে শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা আর টিকছে না বলে জানান তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সর্বশেষ বৃষ্টিপাত ছিল ১৮ এপ্রিল, মাত্র ২.৮ মিলিমিটার। বৃষ্টির পূর্বাভাস না থাকায় চাষিরা এখন প্রার্থনায়-এক পশলা বৃষ্টি যেন তাদের বাগান ও স্বপ্ন দুটোই বাঁচিয়ে দেয়।