ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সংকোচন, আকাশসীমা বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত করল পাকিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সংকুচিত করল পাকিস্তান। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (National Security Committee – NSC) এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের কূটনীতিক সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনা হচ্ছে, যা কার্যকর হবে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে।
একইসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি জানিয়েছে, “ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।” যেসব উপদেষ্টা এবং সহায়ক কর্মীরা বর্তমানে ইসলামাবাদে রয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে কিন্তু সর্বোচ্চ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পদগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছে, ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয় দ্বারা পরিচালিত সকল এয়ারলাইনসের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, ভারতের সঙ্গে সরাসরি বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের আমদানি-রপ্তানিও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহ:বার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, পাকিস্তান ও তার সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সক্ষম। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের “বেপরোয়া অনুপ্রবেশ”-এর সময় পাকিস্তানের “সুচিন্তিত কিন্তু দৃঢ় প্রতিক্রিয়া” তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে।
কমিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতের আগ্রাসী ও একপাক্ষিক পদক্ষেপসমূহ দ্বি-জাতি তত্ত্বকে আবারও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে এবং মহম্মদ আলী জিন্নাহর সেই শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে, যা তিনি ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে প্রকাশ করেছিলেন। এই প্রস্তাব আজও সমগ্র পাকিস্তানি জাতির হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়।
বিবৃতির শেষাংশে পাকিস্তান বলেছে, “পাকিস্তানি জাতি শান্তিতে বিশ্বাসী, তবে কেউ আমাদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অবিচ্ছেদ্য অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে, তা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।”
এই ঘোষণাগুলো এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক উত্তাপ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও খারাপ করে তুলতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপ্রচেষ্টার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
পাকিস্তানের এহেন ঘোষণার পর এখন আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে ভারতীয় প্রতিক্রিয়ার দিকে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপও এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠছে।