পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি: একজন নাগরিকও আক্রান্ত হলে ফল হবে ভয়াবহ
কাশ্মির হামলার পর ভারতকে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের: খাজা আসিফ
বিশ্ব ডেস্ক: কাশ্মিরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর যখন দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার পারদ চড়ছে, ঠিক তখনই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ভারতকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—
“যদি একজন পাকিস্তানিও ক্ষতির সম্মুখীন হন, ভারতকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
গত ২৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দারসহ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদটি প্রথমে প্রকাশ করে বিবিসি উর্দু ও ডন নিউজ।
ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “ভারত যদি পাকিস্তানের মাটিতে কোনো অভিযান চালানোর কথা ভাবে বা আমাদের শহরে হামলার পরিকল্পনা করে, তবে তার ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। কেউ যেন এটা ভুলে না যায় যে, পাকিস্তান আত্মরক্ষার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারতের যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে—ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাতে পারে।”
আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যানের বার্তা
পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা কোনো আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। আগেও যেমন পুলওয়ামা হামলার প্রতিক্রিয়ায় জবাব দেওয়া হয়েছিল, এবারও ভারত কোনো পদক্ষেপ নিলে কঠোরভাবে জবাব দেওয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা যদি আমাদের নাগরিকদের ক্ষতি করেন, তাহলে পাল্টা জবাবের জন্য আমরা প্রস্তুত। এটা যেন কেউ ভুলে না যায়।”
ভারতকে দায়ী করে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ
খাজা আসিফ বলেন, “আমরা ভারতসহ বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা জানাই। তবে, ভারতের পক্ষ থেকেও আমাদের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। কুলভূষণ যাদব তার জীবন্ত প্রমাণ, যিনি পাকিস্তানে গ্রেফতার হয়েছিলেন গুপ্তচর ও সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত থাকার অভিযোগে।”
তিনি আরও বলেন, “বেলুচিস্তান এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর নেতারা বর্তমানে ভারতে চিকিৎসাধীন, এটি আমাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণিত।”
সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে নতুন উত্তেজনা
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। বিশ্বব্যাংক এই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী এবং এখানে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি দাবি করেন, “জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন এবং আমাদের সুরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।”
কাশ্মির হামলা
২৩ এপ্রিল ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকবাহী একটি বাসে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পর্যটক। এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মিরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করেছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম।
দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার ঘনঘটা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এমনিতেই সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে কাশ্মিরে আবার বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ও পারস্পরিক হুঁশিয়ারির ফলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা রাখতে হবে যাতে এই সংকট দুই দেশের মধ্যে পূর্ণমাত্রার সংঘাতে পরিণত না হয়।