কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক

বিশ্ব ডেস্ক: কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের রাজনৈতিক মহলে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদলীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

একইদিনে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে পাকিস্তানও জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।

পহেলগাম হামলা, নিহত ২৬, আহত ১৭

কাশ্মীরের অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে গত সপ্তাহে এক রহস্যজনক সশস্ত্র হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক। আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত মার্কিন প্রযুক্তির অস্ত্র। এই তথ্য সামনে আসার পর হামলার উৎস এবং পেছনের শক্তি নিয়ে দানা বাঁধছে নানা প্রশ্ন।

মোদি সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকের উদ্যোগ

বুধবার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (CCS) এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরপরই সর্বদলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ সংসদে আয়োজিত এ বৈঠকে কাশ্মীর পরিস্থিতি, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।

সরকারি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সর্বদলীয় সমর্থন প্রয়োজন। এ জন্য সংসদীয় কাঠামোর মাধ্যমেই ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একতাবদ্ধ হওয়ার।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা উপস্থিত থেকে পুরো পরিস্থিতির বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবেন। সূত্র মতে, আজকের এই বৈঠকে বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক সমীকরণ

বিরোধী কংগ্রেস দল এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা ও গোয়েন্দা ত্রুটির সমালোচনা করছে। তবে তারা সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নিচ্ছে এবং একটি যৌথ কণ্ঠে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার পক্ষে অবস্থান জানাতে প্রস্তুত। নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (CWC) জরুরি বৈঠকও আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তৃণমূল, আপ, বিএসপি, এনসিপি, ও ডিএমকে–সহ প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বৈঠক করছে। সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকলেও অধিকাংশ দলই একটি সর্বদলীয় অবস্থান নেওয়ার পক্ষে।

পাকিস্তানের তৎপরতা: এনএসসি-র বৈঠক

কাশ্মীরের ঘটনার পর ইসলামাবাদও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এনএসসি-তে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এনএসসি বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং তারা কাশ্মীর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পক্ষে।

উত্তেজনা চূড়ান্তে: দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মুখোমুখি অবস্থান

কাশ্মীর ইস্যুতে নতুন করে উদ্ভূত সঙ্কট দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপও বাড়ানো হচ্ছে। পাকিস্তানও তাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজকের সর্বদলীয় বৈঠক ভারতের ভবিষ্যৎ কৌশলের নির্ধারণী মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে। একদিকে বিরোধীদের ঐক্য প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সরকার কোনো সামরিক বা কূটনৈতিক বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার তাগিদ দেওয়া হতে পারে।