আমরাও ওদের শেষ করব, নাম-নিশান মুছে দেব: শুভেন্দু’র হুঁশিয়ারি
বিশ্ব ডেস্ক: কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া নির্মম জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন কলকাতার দুই বাসিন্দা বিতান অধিকারী ও সমীর গুহ। এ ঘটনায় শুধু নিহতদের পরিবার নয়, পশ্চিমবঙ্গজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে শোক ও ক্ষোভ। নিহতদের মরদেহ কলকাতায় পৌঁছালে বিমানবন্দর প্রাঙ্গণ রূপ নেয় এক আবেগঘন ও উত্তপ্ত পরিবেশে।
“হিন্দুস্তানে হিন্দুকে খুন করবে! গাজাকে যেমন ইসরায়েল শেষ করেছে, আমরাও ওদের শেষ করব। নাম-নিশান মুছে দেব।”
জঙ্গিদের হাতে নিহত বিতান: ছেলের চোখের সামনেই খুন!
বিতান অধিকারী, যিনি কর্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করতেন, সম্প্রতি ছুটি কাটাতে ভারতে এসেছিলেন স্ত্রী সোহিনী এবং আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে। কাশ্মীর ভ্রমণের শেষ প্রান্তে এসে তিনি সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। আততায়ীরা পর্যটক হিসেবে শনাক্ত করে তার ওপর গুলি চালায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিতানের।
বিমানবন্দরে স্বামীর কফিন গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোহিনী অধিকারী। তিনি বলেন, “ছেলের চোখের সামনেই ওর বাবাকে মেরেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেল।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি: ‘আমরাও ওদের শেষ করব’
নিহতদের মরদেহ গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোহিনীর কান্না দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি এবং বলেন, “হিন্দুস্তানে হিন্দুকে খুন করবে! গাজাকে যেমন ইসরায়েল শেষ করেছে, আমরাও ওদের শেষ করব। নাম-নিশান মুছে দেব।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, “২৬ এর বদলে ২৬০ দরকার।” এর মাধ্যমে তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযানের ইঙ্গিত দেন।
সমীর গুহর পরিবারের আর্তনাদ
আরেক নিহত বাঙালি সমীর গুহর পরিবারও উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। সমীর গুহর স্ত্রী অভিযোগ করেন, “তিনি মোদির লোক বলেই তাকে গুলি করে মারা হয়েছে।” এই অভিযোগ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিচারপতি গাঙ্গুলীর প্রতিক্রিয়া: ‘প্রতিশোধ আমরা নেবোই’
বিজেপি সাংসদ ও কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, “পহেলগামে বৈসরন উপত্যকায় যে ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিশোধ আমরা অবশ্যই নেবো। দেখুন কী হয়।” তার বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধের বার্তা ফুটে ওঠে।
নাটক নাকি সহানুভূতি? শাসক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
বিরোধী নেতাদের দাবি, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা শুধুমাত্র “নাটক” করতে এসেছেন। শুভেন্দু বলেন, “রাজ্যের মন্ত্রীরা মমতার নির্দেশে এসে নাটক করছিলেন।” এ নিয়ে শাসক-বিরোধী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
কাশ্মীরের পর্যটক হত্যাকাণ্ড: ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধতা
এই জঘন্য হামলা আবারও কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা নতুন করে আতঙ্কিত। যেখানে দেশপ্রেমিক নাগরিকরা অবসর যাপন করতে যান, সেখানে এই ধরনের হামলা ভারত সরকারের সন্ত্রাস দমন নীতিকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করায়।
কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া এই হামলা শুধু দুটি পরিবারকে ধ্বংস করেনি, এটি ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ঐক্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। একজন সন্তানের চোখের সামনে বাবার মৃত্যু, স্ত্রীর আর্তনাদ, রাজনৈতিক নেতার প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি—সব মিলিয়ে এটি একটি মানবিক ও রাষ্ট্রীয় সংকটের প্রতিচ্ছবি।