ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আটকে দিলেন বিচারক

টুইট ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিষেবা ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছেন মার্কিন এক বিচারক। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্প বেআইনিভাবে ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।

এর আগে গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ জনেরও বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। বুধবার (২৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধে ট্রাম্পের উদ্যোগকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক। মার্কিন ফেডারেল ওই বিচারক জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেআইনিভাবে ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।

কংগ্রেস-গঠিত এবং রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি ৮৩ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সংবাদ প্রচার করে আসছে।

মঙ্গলবার দেওয়া রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক রয়স ল্যাম্বার্থ নির্দেশ দিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যেন ভয়েস অব আমেরিকার পূর্বের সক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে আনে-বাজেট কাটছাঁট এবং ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের আগে যেভাবে সংবাদমাধ্যমটি কাজ করছিল।

এর আগে গত মার্চে ভয়েস অব আমেরিকা আদালতে জানায়, তাদের ১৩০০ জন কর্মীকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল, এই সংস্থা “বামপন্থি পক্ষপাতিত্ব” করে এবং যথেষ্ট “আমেরিকানপন্থি” নয়। তবে ভয়েস অব আমেরিকার আইনজীবীরা বলেন, তারা সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং বস্তুগত সংবাদ পরিবেশনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিচারক ল্যাম্বার্থ আরও দুটি সংবাদমাধ্যম- রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্কস – যারা একইভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চলে, সেগুলোর সক্ষমতাও ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি এবং ওপেন টেকনোলজি ফান্ড-এর ক্ষেত্রে একই রকম আবেদন নাকচ করেছেন বিচারক।

রায়ে বিচারক বলেন, ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের পেছনে ছিল “অবিবেচনাপ্রসূত, তড়িঘড়ি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত”, যা প্রমাণ করে প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন। ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠরা এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে “বামপন্থি” কিংবা “আমেরিকাবিরোধী” মনে করে বাজেট কাটছাঁট করছেন এবং আদর্শিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে এই রায়কে মিডিয়া কর্মীদের সংগঠন একটি “শক্তিশালী বার্তা” হিসেবে দেখছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষায় এর ভূমিকা তুলে ধরে।

প্রসঙ্গত, ভয়েস অব আমেরিকা গঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়-নাৎসি প্রচারণার জবাব দিতে। স্নায়ু যুদ্ধকালেও এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন স্বার্থ তুলে ধরার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

যদিও অতীতের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে অনেকেই ভয়েস অব আমেরিকাকে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে সমালোচনা করেন। সংস্থাটি এখনও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যের নিরপেক্ষতা রক্ষার দাবি করে থাকে।