৭২৫ বাংলাদেশি সেনাসদস্যকে কাতারে নিয়োগের সিদ্ধান্ত: বাস্তবায়ন ২ মাসের মধ্যে
বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন সেনাসদস্যকে কাতারে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে। এই সেনাসদস্যরা কাতারের বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ স্থানে নিযুক্ত হবেন।
প্রতি তিন বছর পরপর এই সংখ্যা পুনরায় নেওয়া হবে, এবং ভবিষ্যতে নিয়োগের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এই তথ্য মঙ্গলবার দোহায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, এই উদ্যোগ কাতারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সহায়তা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মর্যাদার সুযোগও সৃষ্টি করবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দোহায় অনুষ্ঠিত আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সামরিক কাঠামো, সামর্থ্য এবং আন্তর্জাতিক অবদান নিয়ে বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ও কাতার সেনাবাহিনী: এক তুলনামূলক পর্যালোচনা
দুই দেশের সেনাবাহিনীই ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে গঠনকাল এক হলেও তাদের বিস্তার ও কার্যক্রমে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার, যেখানে কাতারের সশস্ত্র বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা মাত্র ২৬ হাজার ৫৫০। এই ব্যবধান থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাঠামোগতভাবে অনেক বিস্তৃত এবং বৃহৎ।
আর্থিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করেছে। অপরদিকে, কাতারের সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে, তাদের ২০১০ সালের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ১.৯১৩ বিলিয়ন ডলার। তবে কাতার একটি তেলসমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ায় তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রযুক্তি ও আধুনিক সরঞ্জামে কেন্দ্রীভূত।
আন্তর্জাতিক অবদান বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় অবদানকারী দেশ। কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, মালি, হাইতি সহ একাধিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বাংলাদেশি সেনারা তাদের সাহস, পেশাদারিত্ব ও মানবিকতা দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। অপরদিকে, কাতার উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসি (GCC)-এর সদস্য হিসেবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সহায়তায় সক্রিয় অংশ নেয়।
কৌশলগত গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই নিয়োগের মাধ্যমে কাতার যেমন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সেনাসদস্য পাবে, তেমনি বাংলাদেশ সেনাসদস্যদের জন্য এটি হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি বড় সুযোগ। এতে বাংলাদেশি সেনারা আরও দক্ষ হয়ে উঠবে, যা ভবিষ্যতে দেশের প্রতিরক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
একইসঙ্গে, এই নিয়োগ কাতারের সামরিক সক্ষমতাকেও সমৃদ্ধ করবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষা মিশনে অর্জিত সুনাম কাতারের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে এই সামরিক সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি শুধু একটি নিয়োগ কার্যক্রম নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও দৃঢ় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।