প্রতিদিন ২ কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয় যে বাজারে
টুইট ডেস্ক : দিনাজপুর সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় টমেটোর বাজার গাবুড়া বাজার। গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে দিনাজপুর-চিরিরবন্দর সড়কের পাশে নিয়মিত বসে এই বাজার। প্রতিদিন এখানে প্রায় ২ কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, নদী তীর থেকে মাস্তান বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়কের উভয় পাশে এমনকি মানুষের বাড়ির আঙিনাতেও অস্থায়ী আড়ৎ বানানো হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক পাইকার এসেছেন টমেটো কিনতে। ভোরের আলো ফুটবার আগে থেকে টমেটো চাষিরা বড় বড় খাঁচায় করে টমেটো বিক্রি করতে আসছেন। টমেটো জাতভেদে পাইকার ও কৃষদের মধ্যে চলে দর কষাকষি। বিপুল প্লাস, প্রভেনসিভ, রোমা ভিএফ, মিন্টু সুপার, আনসাল, রানী এবং শক্তি প্লাস নানা জাতের টমেটো। কোনটি গোলাকার কোনটি লম্বাকৃতির। দামে মিললে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাইকারের আড়তঘরে। সেখানে ক্যারেট ভরানো হচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ক্যারেটগুলো তুলছেন ট্রাক শ্রমিকরা। দৈনিক শতাধিক ট্রাকে গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় দিনাজপুরের গাবুড়া বাজারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে গত অর্থ বছরে টমেটোর আবাদ হয়েছিল ৯২৫ হেক্টর জমিতে এবার সেখানে ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয় জেলার চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলায়।
চিরিরবন্দর উপজেলার কাউগা এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফলন কম ছিল। কিন্তু দাম পাইছি ভালো। এবার ফলন ভালো হয়েছে দাম টা কম। শুরুতেই ৪০০-৫০০ টাকা মণ পাচ্ছি। দুই বিঘা মাটি বিপুল প্লাস জাতের টমেটো লাগাইছি। দুই বিঘা জমিতে লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টমেটোর কেজি ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা। এটা যদি ২০ টাকা থাকত তাহলে বেশ লাভবান হওয়া যেত।
ঢাকা থেকে টমেটো কিনতে আসা পাইকার সজিব আহমেদ বলেন, এবার ঈদের দুই দিন পরেই আসছি। দৈনিক ৫-৭টি ট্রাক লোড হচ্ছে। এখানকার টমেটোর একটা সুনাম আছে। চাষিদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক আছে আমাদের। ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মণ কিনেছি। চাষিরাও দাম কম পাচ্ছে আমরাও লাভবান হতে পারছি না। আগের তুলনায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। লাভ কম হচ্ছে আবার কোনটাতে হচ্ছেই না।
রাজবাড়ী থেকে টমেটো কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে এই বাজার থেকে টমেটো কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি। মৌসুমে টানা দুই মাস এই অঞ্চলে থাকি। চাষিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়েছে। দিনাজপুরের টমেটো চাষিদের সঙ্গে পাইকারদের সম্পর্ক বেশ গভীর। প্রতিদিন গাবুর বাজার থেকে প্রায় শতাধিক ট্রাকে টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। একটি ট্রাকে প্রায় ২ দুই লাখ ৫০ হাজার টমেটো যায়। এতে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার বেশি টমেটো বিক্রি হয় গাবুড়া হাটে।
টমেটো ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দিনাজপুর গাবুড়া বাজারে টমেটো দেশের সব মার্কেট চলে যায়। এখন একটু বাজারটা কম কারণ টমেটোর প্রচুর আমদানি হচ্ছে। দুই তিন সপ্তাহ পর টমেটোর আমদানি কমতে শুরু করলে বাজারও বাড়তে শুরু করবে। তখন ইন্ডিয়ান টমেটো আমদানি করে এতে কৃষক ও আমরা ব্যবসায়িরাও লস করি। ইন্ডিয়ান টমেটো দেশে না আনলে দেশের কৃষক ভালো লাভবান হবে। আমরা ব্যবসায়ীরাও লাভবান হব।
গাবুরা টমেটো বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, এই বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাজারের আশপাশের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। হাট ইজারা বাবদ প্রতি মণ টমেটোর জন্য ১৫ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। এ কারণে হাটের পরিসর দিন দিন বাড়ছে।