বিশ্ব ধরিত্রী দিবস আজ
টুইট ডেস্ক: আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। প্রতিবছর ২২ এপ্রিল পরিবেশ রক্ষা এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী উদ্যাপিত হয়। প্রকৃতি রক্ষায় অঙ্গীকারের এই দিবসে এবছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী’। পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার অঙ্গীকারে বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হচ্ছে এ বিশেষ দিনটি।
জানা যায়, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গে লর্ড নেলসন এই দিবসের প্রবর্তন করেন পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে। সেই থেকে প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। বর্তমানে ১৯৩টিরও বেশি দেশে পালিত হয় ধরিত্রী দিবস।
বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, বন উজাড়, প্লাস্টিক দূষণ ও অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া টেকসই পৃথিবী নির্মাণ সম্ভব নয়। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস সেই সচেতনতা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
বাংলাদেশে আজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ধরিত্রী দিবস পালিত হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থান, ঘনবসতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারা আমাদের পরিবেশগত সংকটকে আরও তীব্র করেছে। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল, যদিও আমরা বৈশ্বিকভাবে মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করি। তবুও, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেই প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিয়মিত বর্ষণ, কৃষি উৎপাদনের হ্রাস—সবই তার প্রমাণ। তাই টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শক্তির উৎস বদলানো এখন সময়ের দাবি। সৌর, বায়ু ও জৈবজ্বালানির মতো নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানো একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে তা অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। এই পরিবর্তন বাস্তবায়নে প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং কার্যকর নীতির সহায়তা।
সরকারের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ২০২১ সালে ঘোষিত ‘জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি’ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে দরকার বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য কর ছাড়, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং সরকারি উদ্যোগে সোলার প্যানেল বাধ্যতামূলক করার মতো কার্যকর পদক্ষেপ। এছাড়া, বাংলাদেশের উপকূল, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।